কলিকাতা আদি ব্রাহ্মসমাজ যন্ত্রে জ্রীদেবেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্য দ্বার! মুদ্রিত। ৫৫নং অপার চিৎপুর রোড । সন ১৩১০, ২৮ শ্রাবণ ।
শীজোতিরিন্দরনাথ ঠাকুর কর্তৃক
সঙ্কলিত ও ভাষান্তরিত ।
কলিকাতা আদি ত্রাঙ্মপদমাজ যন্ত্রে
শ্রীদেবেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্ধ্য দার মুদ্রিত।
৫৫নং অপর চিৎপুর রোড । সণ ১১১০ ।
মুলা ॥* আন!
নুচিগত্র। ব্ষয়।
কনিকাতা দার্জিলিং ও দিংহ্ল
দিংহবে বৌদ্ধ ্
শানে মায়াবাদ ও অধৈতবাদ '" তারতবর্ধে-জয়গুর ভারতবর্ষে বারাধী
৪8$
ৃা।
কলিকাতা, দার্জছিলিৎ ও দিংহল।
ছুই বংসর হইল আদরে শেন্রিয়ে! নামক একজন ফরাদিম্ পর্যাটক ভারতবর্ষে আসিয়াছিলেন। তিনি তাহার ভ্রমণরত্তাস্ত গ্রন্থাকারে প্রকাশ করিয়াছেন । ভারতবর্ষের প্রধান প্রধান স্থান ও অধিবাঁগীদিগের আচার ব্যবহার, ধর্ম, রীতিনীতি পরিদর্শন করিয়া! তাহার মনে খন যে ভাব উপস্থিত হইয়াছে তাহা তিনি অতি সরন ভাষায় লিপিবদ্ধ করিয়াছেন । তাহার লেখার ধরণ অতীব মনোৌরম। তীহার বর্ণনাশক্তি চমত্কার। তাহাতে চিত্রকরের নিপুণতা লক্ষিত হয়। দুই একটা সামান্ত আঁচড় দিয়া এক-একটা ছবি কেমন জলন্তন্ূপে ফুটাইরা তুপিয়াছেন। তাহার বাহ্ৃপ্ররুতির বর্ণনা কবিত্বরসে পুর্ণ। তাহার আর একটি প্রধান গুণ এই, বিদ্েশীয় আচার ব্যবহার, ধর্ম প্রভৃতির সমালোচনায় তাহার লেখায় কোনপ্রকার সন্ীর্ঘতা প্রকাশ পায় না। তিনি যতদূর পারিয়াছেন, ভিতর পর্য্যন্ত তলাইয়! দেখিতে চেষ্টা করিয়াছেন, এবং দেশকালপাত্র বিবেচনা করিয়! সঙ্গদয়ভাবে ও উদারভাবে মস্ত পর্যালোচনা করিয়াছেন। এরূপ উদারতা বোধ হয় ফরাসীদিগের জাতীয় ধর্ম। ইংরাজ পর্ধ্যট কদিগের লেখায় এরূপ ভাব সচরাচর দেখা যায় না।
দার্জিলিঙ্গের ইংরাজ-” জের উল্লেখ করিনা তিনি বলেন--
ঠ
ই ভারতবর্ষে ।
«এই “আ্যাসেপ্ লি-রুম্স্ত-এ সন্ধাকালে নৃত্য হয়-সেই সম্ষে স্ীপুরুষের মধ্যে রসালাঁপ চলে, এবং সেই রপালাঁপ পরিণামে বিবাহে পর্যবসিত হয়। *** *** এই দেখ সৈনিকের দল--বাঙ্গা- মুখ, ব্যায়াম-গঠিত সবল শরীর, চুল পমেটমলিপ্ত,_উহারা বারিকে জেপ্টল-ম্যানের মত বাস করে--ছড়ি হাতে, অবৈতনিকের ভাবে, বিজেতৃভাবে সদর্পে পায়চালি করে। এই দেখ ভদ্র “বোডিং হাউস্ঃ। দিনান্ত-ভোজনের উপলক্ষ্যে সবাই কালো! কোর্তী পরি- যাছে। বাড়ির কত্রী ভোজনের আরস্তে দস্তরমত প্রার্থনা উচ্চারণ করিতেছেন, এবং মাংসের পাঁংলা-পাংলা, চাঁকৃল। কাটিয়া ও চাঁপ্, চাপ্ “পুডিংএর টুকৃরা সকলের পাতে শিষ্টতা-সহকাঁরে চালান করিতেছেন। গৃহস্বামী, ধাহার অস্তিত্ব বিলুপ্ত বলিলেই হয়, অথচ যাহার না থাকাটাও ভাল দেখায় না_-তিনি গৃহের মন্ত্রম মর্য্যাদ! রক্ষা করিবার জন্তই যেন অধিষ্টিত। ভোজনকাঁলে শান্তভাবে কথাবার্তী আরম্ভ হইল--দে কথাবার্ত! স্থশিক্ষিত, শান্ত ও সামা- জিক লোকদ্িগেরই উপঘুক্ত। আহারের পর বৈঠকখানায় ঘাওয়! গেল। একটি যুবতী মহিল! পিয়ানো বাজাইতে বদসিলেন। কতক- গুলি প্রেমের গান ও স্বদেশের গৌরব-ন্চক গান বাজান হইল। পরদ্িনে কোথায় ভ্রমণ কর! যাইবে স্থির করিরা মজ্লিন্ ভঙ্গ হইল। ইহার সহিত টন্কিন ও ট্যুনিস্ গ্রভৃতি ফরাসী উপনিবেশের তুলনা করিয়া দেখ। ফরাদী ও্পনিবেশিকেরা প্রায়ই অবিবাহিত। তাহাদের যেন সময় কাটে না প্রবাসের কষ্ট তাহারা কি তীব্র রূপেই অনুভব করে। এখানে ইংরাজেরা যেন ইংলগ্ডেই রহিয়াছে। শুধু যে তাহাদের অনুষ্ঠান, তাহাদের অভ্যাস, তাহাদের জাতীয় স্কার এখানে আনয়ন করিয়াছে তাহা নহে, নিজ জন্বস্থানের বহিদৃশ্যি ও সাজপক্জা পর্যন্ত যেন এখানে উঠাইয়া আনিয়াছে।
কলিকাতা, দ্বাঙ্জিলিং ও সিংহল ত
ভিন্ন দেশের সংস্পর্শে তাহাদের স্বভাবের কিছুমাত্র ব্যতিক্রম হয় নাই। আদল কথা, ইংরাজের। যেরূপ ছূর্ণম্য এমন কোন জাতিই নহে-_নূতন অবস্থার মহিত আপনাদিগকে উপযোগী করিয়৷ লইতে উহার! নিতান্ত অক্ষম। আপনাদের যে ছীচ, যে ব্যক্তিগত ভাঁব, তাহা কিছুতেই তাহার! ছাঁড়িতে পারে না। ইহা হইতেই তাহা- দের এত নৈতিক বল। কতকগুলি অপরিবর্তনীয় সংস্কার থাকাতেই তাহাদের ইচ্ছার এত বল, কিন্তু আবার এই কারণেই তাহাদের সহানুভূতি ও বুদ্ধির বিকাশ সীমাবদ্ধ। ইহারা এদেশীঘ্ লোক" দিগকে একেবারেই বুঝে না, এবং বুঝিতে চেষ্টাও করে না। নিজ সভ্যতার উচ্চভূমিতে দণ্ডায়মান হইয়া এদেশীয় লৌকদ্দিগকে অদ্ধ-অসভ্য “পৌত্তলিক বলির নিরীক্ষণ করে। এই “পৌন্তলিক, শবটি কি হিন্দু, কি বৌদ্ধ, কি পানী সকলের প্রতি নির্বিশেষে উহার! প্রয়োগ করিয়া থাকে । ****** এদেশীয় লোকের মধ্যে উহার কেবল কুলি কিম্বা! খানদামার মৃন্তিই দেখিতে পার--উহার! মনে করে, এদেশীর লোকেরা মোট বহন ও জুতা সাফ করিবার পক্ষেই ভাল। দেশের সন্বন্ধেও উহাদের এই ভাব। উহাঁরা এই দেশকে কেবল ব্যবস। বাণিজ্যের স্থান_-কৃষিক্ষেত্ররূপেই দশন করে।”
কলিকাতা! দেথিয়! তাহার প্রথম সংস্কার কিরূপ হইয়াছিল তাহা এইরূপে বর্ণনা করিয়াছেন ।_-“কলিকাতায় তিনদ্িন। লোকের জনতার হতবুদ্ধি ও গ্রীষ্মের তাপে গ্রপীড়িত হইয়া কিছুই দেখি নাই। কেবল একটা সাদা রংএর অনুভব মনের উপর ভাসিতেছিল। সাদা আলো, সাদা বাড়ি, সাদা-কাপড়পর! লোকের আ্রোত রাস্ত। দিয়! চলিয়াছে । .* *** দোকান, আফিস, ব্যাঙ্ক, গাড়ি ঘোড়া, দেয়ালে-মারা বিজ্ঞাপনের সংখ্যা দেখিয়া মনে
£& ভারতবর্ষে ।
হয় যেন লঙন কিন্বা প্যারিসনগরের এক্সচেঞ্জের নিকটে আছি । প্রভেদ এই, বড় বড় কালো.কোর্ভাপরা, নলাকা র-টুপিপরা রুরোপীয়ের বদলে সাদা ধুতি-পরা, ক্ষুদ্র, শীর্ণ, সুকুমার স্ত্রীন্ুলভ মুখত্রীসম্পন্ন বাঙ্গালীদিগের কলরব । ইহারা দিংহলবাসীদিগের মত অলদ ও নিদ্রালু নহে, পরন্থ কর্মশীল, চটুল, দ্রুতগামী ও জীব্ন- উদ্যমে পরিপূর্ণ । পেন্সিলবিক্রেতা “হকার? হইতে ফিটেনে'ঠেসান- দেওয়! স্থলদেহ বাবু পর্যান্ত সবাই অর্থের চেষ্টায় ফিরিতেছে। দেখিয়। বেশ অনুভব হয়, কলিকাতা নগর একটি প্রধান বাণিজ্যের স্থান--পৃথিবীর একট মহ! বিপণি।
এপিয়া ও লগুনের' এই সংমিশ্রণ বড়ই অদ্ভূত। এক-এক সময়ে মনে হয় ঘেন লগ্ডনের ওয়েষ্টএণ্ডে হাউড্পার্কের নিকটে আছি। দেই রকম বড় বড় সোজা! রাস্তা, সেই রকম উত্তচ্গ প্রাসাদ, সেই রকম গ্রীদীয় স্তত্তঘুক্ত গাঁড়িবারাওা, সেই রকম বিস্তুত পদচারণ- পথ, সেই রকম রেল-ঘেরা চৌকোণ| নগরাঙ্গন, রাস্তার কোণে কোণে প্রতিষ্ঠিত সেই রকম ইংরাজি প্রস্তরমূ্তি ৮
গ্রন্থকার এক স্থানে ইংরাজের সহিত হিন্দুর তুলনা করিয়া বলিয়াছেন £_-“ইংরাজের! এরূপ ছুর্ণম্য ও কঠিন যে, বিশ কোটি হিন্দুদিগের মধ্যে হারাইয়! গরিয়াও উহাদের কিছুমাত্র পরিবর্তন হয় নাই; পক্ষান্তরে হিন্দুর লক্ষ ইংরাজের সংস্পর্শেই পরিবন্ভিত হইয়াছে বলিয়া মনে হয়। কলিকাতায় দেশীয় লোকের! ইংরা- জিতে গ্রন্থ লিখিতেছে, সংবাদপত্র চালাইতেছে দেখিলাম ) গুধু যে তাহাদের ইংরাজি চমৎকার তাহ নহে--তাহাতে ইংরাজি ধরণ- ধারণ, ভাব-ভক্তি, ইংরাজি ধরণের ভাবনা, ইংরাঁজি ধরণের অনুভব সমস্তই বজায় দেখিতে পাওয়! যায়। কোন কোন প্রবন্ধ পাঠ করিরা বনে হন যেন লগ্ডনের কোন উত্কষ্ট নমালোচনী- পত্রিকার
কলিকাতা, দার্জিলিং ও দিংহল। ৫
সম্পাদক কোন পাদ্রির লেখনী হইতে নিঃস্থত। এরূপ কতকগুলি ছাচ-গ্রাহী আটিই দেখিতে পাওয়া যায় যাহারা নিজত্বম্পন্ন কোন প্রঠিভাশালী ব্যক্তির সহিত কিছুকাল কথা কহিম়্াই তাহার ধরণ-ধারণ, হাব-ভাব, কেতার অবিকল নকল তুলিতে পারে। কারলাইল ইঙ্গ-স্তাক্সন জাতির উল্লেখ করিয়া বলিয়াছেন-__উহ্বারা পপাষাণ-গঠিত জাতি” । পাধাণ-গঠিত জাতিই বটে) হিন্দুর কর্দম- ছাচে স্বকীয় পাষাণ-মুত্তির ছাপ বসাইরা উহারা নিজে অবিকৃত রুহিয়াছে, অথচ আপনাদিগের প্রত্যেক খোঁচ্-খাচ সেই হিন্দুর স্ুনম্য ছাচে মুদ্রিত করিয়া দিয়াছে।”
ভারতবর্ষের কতিপয় প্রধান নগরের স্বরূপ-লক্ষণ গ্রন্থকার কেমন বেশ সংক্ষেপে ব্যক্ত করিয়াছেন। তিনি বলেন--“কলি- কাতা ইংরাজের ভারতবর্ষ) বারাণনী ব্রাহ্মণের ভারতবর্ষ; আগ্রা মোগলদিগের ভারতব্ষ; আর জয়পুর রাজাদিগের ভারতবর্ষ-_ উপন্তাষের ভারতবষ।৮
ইলোরা-গুহায় মহাদেবের মৃত্তি দেখিয়! গ্রন্থকার হিন্দুধন্র-সন্বন্ধে নিজ মতামত ব্যক্ত করিয়াছেন। তিনি বলেন ;--“সংহার-শক্তি ও স্থজন-শক্তি ব্রাহ্মণদিগের মতে একই শক্তির বিভিন্ন আকারমাত্রঃ তাহাদের সংহারের ও স্থজনের দেবত। পৃথক নহে, একই ইহাই ব্রাহ্মণদের মহা নুতনত্ব। অন্তান্ত জাতি মন্ুষ্যভাবে দেবতাকে দেখিতে গিয়'_ভালমন্দ, দ্ুন্দর কুৎদিত__-এইরূপ বিভিন্ন পৃথক্ পৃথক্ আপেক্ষিক লক্ষণে আপনাদিগের দেবতাদ্িগকে লক্ষণাক্রান্ত করিয়াছেন। কিন্ত হিন্দুরা অপীমের দিক্ দিয়া দেখিয়াছেন বলিয়া তাহাদের নিকট দেবও নাই দানব্ও নাই, পরন্ত এক নিরথেক্ষ অনীম শক্তি বর্তমান ; তিনিই স্বজন করেন, তিনিই মংহার করেন- তিনিই একমাত্র তত | আরও বথাধথরূপে
ষেভারতব।
বলিতে গেলে, হিন্দ্িগের নিকট মৃত্যু একটি পরিবর্তন মাত্র ;-_ ঘে পরিবর্তনের সমগ্র শ্রেণীপরম্পরাই জীবন। তাহারা যাহা বপেন আধুনিক বিজ্ঞানও তাহাই বলে। জীবন-বিশিষ্ট জীব-বিশেষ এক-একটি আকারমাত্র_-উপার্ধান-পুক্লীকরণের বিভিন্ন প্রণালী- মীত্র। আমাদের দেহের কোধাণু লইম্ব(ই আমাদের সমগ্র দেহ; সেই কোষাথুদমূহ ক্ষণে ক্ষণে মরিতেছে-_তাহাতেই আমরা জীবিত আছি। :* *** *** *** সমস্ত জগৎকে মহাসাগরের সহিত তুলনা করা যাইতে পারে। তাহাতে অদংখ্য তরঙ্গের হিল্লোল বহিতেছে ; এই প্রত্যেক তরঙ্গ যাহ! উঠিতেছে ও পড়িতেছে উহা! এক একটি জীবনস্বরূপ-_যাহার আরন্ত ও শেষ আমরা দেখিতে পাই। তরঙ্গদকল যেমন ফেণৌচ্ছাসে ভাঙ্গিয়া পড়িতেছে। অমনি এক দুর্দিম্য শক্তি আসিয়া আবার উহাদিগক আলোকের দিকে উদ্ধে উঠাইতেছে। কিন্তু কেনা দেখিতে পায়, এই নৃত্যশীল তরঙ্গকল এক-একটি আঁকার মাত্র, কারণ প্রতিমুহূর্তেই তাহাদের উপাদান ভিন্ন হইয়! যাইতেছে_-তাহাদের মধ্যে বাস্তবিক আর কিছুই নহে, ধে-এক অদ্বিতীয় সাধারণ শক্তি তাহাদের মধ্যে আছে তাহাই কেবল বাস্তবিক--তাহাই সমস্ত সাগরকে বিচলিত করিয়া তুলিতেছে। কোন জীববিশেষ এই মহাশক্তির ক্ষণিক বিকাশমাত্র। সে জীব পরিবন্তিত হউক, বিকৃত হউক, মৃত্যুমুখে পতিত হউ ক-- সেই শক্তির তাহাতে কিছুমাত্র আইসে যায় না। সেই একই শিবশক্তি যাহা! জগতের আদিম নৈহারিক অবস্থায় কাজ করিয়া- ছিল, তাহা আজও সূর্য্য গ্রহণক্ষত্রে বিকাশিত হইয়া আমাদের ভূলৌকে মহাঁদেশরূপে, সমুদ্ররূপে, পর্ধতরূপে, জীবরূপে, মন্ুষ্য- রূপে, সমাজর্ূপে, নগরর্ূপে বিকীর্ণ হইতেছে। সেই "একই শিবশক্তি, দৃশ্যমান গতিকে আণবিক গতিতে পরিণত করিয়া
কলিকাতা, দার্জিলিং ও সিংহল। ণ
কাঁলদহকারে গ্রহের উপর গ্রহের পতন সংঘটন করিয়1, পরিণামে আপনার নেই অনির্দেশ্য আদিম শক্তিতে ফিরিয়া যাইতেছে যাহা হইতে ক্ধ্য, গ্রহনক্ষত্র, সমুদ্র, মহাদেশ, উদ্ভিচ্জ, সমস্ত জীবপুঞ্ত পুনর্বার নিঃস্থত হইতে পারে । কে বলিতে পারে, এক সৌর-জগৎ ঘুরিতে ঘুরিতে ক্রমে আর এক মৌর'জগতের উপর পড়িয়া কালে সমস্ত হ্ৃষ্টিই বিনাশ প্রাপ্ত হইবে না হিন্দুর প্রন্রা-চক্ষু এই সম্ভাবনীয় নিয়মের একটু আভাম পাইয়াছে; কারণ, তাহারা বলেন, কত অনংখা যুগে ব্রহ্মার একদিন হয় । সেই কালের মধ্যে নিগুণ ব্রহ্ম অভিবাত্ত হইর়1, বিকশিত হইয়া, জীব স্থষ্টি করিয়া, সচেতন হইয়া, পুনব্বার আপনাকে সন্কুচিত করি নিপুণ অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করেন । এই শক্তির রূপক হিন্দরা আর কিরূপে কল্পনা করিতে পারে--তাই তাহারা শিবকে বষ্টিকর্তী প্রলয়কর্তী” বলিয়৷ সম্বোধন করে |”
গ্রন্থকার হিন্দুধর্মের সর্ধাশ্রয়ী ও সর্ব্সহিষু উদীরভাব ও উহার গঠনপ্রগালী ঠিক ধরিতে পারিয়াছেন। তিনি এক স্থানে এইরূপ বলেন 2 -“কলিকাতায় একজন ইংরাজ আমার নিকট আক্ষেপ করিতেছিলেন, খুষ্টধর্ম-প্রচারে তেমন সফলতা হইতেছে না । *৮.-৭ বাহ্মণেরা ধৈর্যা, মহিষুতা ও কৌতুহলপহকারে খুষ্টধর্ঘম প্রচারক- দিগের কথ শ্রবণ করে। উহাদের ধর্ম এরূপ বনৃভাবাত্মক ও বহুমতাত্মক যে উহ্থাকে একটি পদার্থ মনে করিয়া ধরিতে-ছু'ইতে পারা যায় না। ইংবাজ মিশনবিরা মুদলমানদিগকে ধর্মের তর্কে যেরূপ পরাস্ত করিতে পারে বলিয়া অভিমান করে, হিন্দুদিগকে সেরূপ পরাস্ত করা অসম্তভব। থৃষ্টীয় প্রচারকেরা যতই কেন প্রতি- বন্ধক আনয়ন করুন না, তাহাতে হিন্দুধন্মের গতিরোধ হওয়া দূরে থাক্, হিন্দুধর্মের জীবনী-শক্ত ও উপযোগিনী-শক্তি এত বলবতী
৮ ভারতবর্ষে |
ঘে, সেই মকল প্রতিবন্ধককে অনায়াদে আত্মা ও পরিপাঁক করিয়া সে আপনার কাঁয় বুদ্ধি করিয়া থাকে । এমন কি, ব্রাঙ্গ- ণেরা বলেন, তাহীর৷ তেত্রিশ কোটি দেবতার মধ্যে ধৃষ্টকেও প্রবিষ্ট করাইতে পারেন যদি খুষ্টানেরা এই কথাটি মাত্র স্বীকার করেন যে, যুরোপীয়দিগ্ের জন্য বিষণ থৃষ্টের আকারে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হইয়াছেন। এইপ্রকারে, কলিকাতার আধুনিক ত্রাঙ্গ-সম্প্রদাস্ স্বাধীন চিন্তাশীল ইংরাজ লেখকদিগের নৈতিক একেশ্বরবাদ অবলম্বন করিয়াছেন। স্থষ্টি হইতে বিভিন্ন ঈশ্বরের অনন্ত অসীম ব্ক্তিগভ অস্তিত্ব, জগতের পিতৃবৎ শাদনপ্রণালী, আত্মা ও দেহের ভিন্নতা, পরকালের দ্রণ্ড-পুরস্কার প্রভৃতি সাধারণ দার্শনিক তত্নকল যাহা আব্কাল ইংলগ্ডে প্রচলিত তাহা এ সম্প্রদায় আত্মস্থ করিয়াছে! পূর্বকালেও হিন্দুধর্ম এইরূপ বৌদ্ধধর্মকে একেবারে অগ্রাহা না করিয়।, পর্ত উহার সাম্প্রদায়িক বিশ্বাসের উপকরণগুলি আস্তে আস্তে পরিত্যাগ করিয্কা, কেবলমাত্র উহার সার-রসটুকু লইয়া আপনার দেহ পরিপুষ্ট করিয়াছিল। মাধুর্যা, বিশ্বজনীন দয়াদাক্ষিণ্য,- যাহা ইতরজীব পর্যান্ত প্রসা- রিত-_সন্গ্যাসধর্খ, এই সকল লক্ষণের দ্বার! মনে হয়, শাকাসিংহের আত্মা এখনও ভারতভূমিতে বিরাজ করিতেছে । এইপ্রকারে ভারতের ধন্ম বাচিয়া আছে, ও বৃদ্ধি লাভ করিতেছে । এই ধর্ম সর্বাপেক্ষা স্ুনম্য ও অবস্থান্থগামী ;) এবং ইহা! এত জটিল, এত অসংলগ্ন ও পরিবর্তনশীল উপকরণে গঠিত, উহার আকার এক্ূপ চঞ্চল, এত অনিশ্চিত যে উহাকে একটি-ধর্ম বলিয়া মনে হয় না। এক হিসাবে, উহাকে এক ধর্ম বলাও যাইতে পারে, যেমন বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন জলবাযুবিশিষ্ট এই বিচিত্র ভৌগোলিক সমষ্টিকে একদেশ বলিতেছি, কিন্বাঁ এই বিচিত্র জাতি ও বর্ণের
কলিকাতা, দাঞজ্জিলিং ও সিংহল। রে
সন্মিলনকে আমরা এক হিন্দুজাতি বলিতেছি। এ বৈচিত্রোর _মধোও একটা ধক্যস্থল আছে। ভারতীয় ধর্মের ত্রস্থানে অদ্বৈত- বাদ প্রথমে সুস্পষ্টরূপে লক্ষিত হয়; তাহার পর ত্রিশ শতাব্দী কাল ধরিয়া, জিত, ও বিজেতাদের ধর্ম মিশিত হইয়া গিয়। সেই অদ্বৈতবাদ একটু তিমিরাচ্ছন্ন হইয়াছে; আজিকার দিনে, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন নৈতিক ও দার্শনিক মতের জাল হিদ্দু- ধর্মের মধ্যে বিস্তীর্ণ হইয়। এরপ প্রকাণ্ড আকার ধারণ করিয়াছে যে, উহার শৃঙ্খল আর খুঁজিয়া পাওয়া ভার । এইপ্রকাঁর, ভারতের বিস্তীর্ণ কর্দমময় গঙ্গানদীও বিভিন্ন আ্োতন্বিনীর চির- প্রবাহী জোতে পরিপুষ্ট হইয়া, রাশি-রাশি উদ্ভিজ্জাবশেষের ভারে আক্রান্ত হইয়া_-বন, জঙ্গল, পুরাতন জনপদ, আধুনিক ইংরাঁজ-নগর প্রভৃতির মধ্য দিয়া অনিশ্চিত গতিতে আকিয়া বাকিয়া চলিয়াছে ; এবং বিস্তৃত ভূমি প্লাবিত ও উর্বরা করিয়া, নানা শাখাপ্রশাখ। বিস্তার করতঃ সাগরে িলাইয়া গিয়াছে”, পাঠককে মুলগ্রন্থ পড়িতে অন্বরোধ করি--তাহাতে ধে তিনি আমোদ ও উপদেশ একাধারে প্রাপ্ত হইবেন ইহা! মুক্ত- কণ্ঠে বল! যাইতে পারে।
(২)
ফরাপী পর্যটক আন্দ্রেশেত্রিয়ে! মিংহলদ্বীপ প্রথম বখন
জাহাজ হইতে দেখেন তখন তাহার কিরূপ মনে হইয়াছিল
তাহ! বর্ণনা করিয়াছেন। “গত কল্য “কোইট্,-খেলা ছুই
বাদ্ধি হইল, "তাহার মধ্যে একটি ছোট ইংরাজ বাঁলিকা,__মুপের
রঙ ফ্যাকাসে ও স্বভাব একগ্ঁয়ে,--কাপ্তেনের নিকট এই অঙ্গী,
কার করিল, যদি আঙগ সন্ধার সময় আমরা কলম্বো নগরে ৫
১৩ ভাঁরতবর্ষে।
পৌছিতে পারি তাহা হইলে সে তাহাকে তাহার একটি মুচ্কি হাদি দান করিবে। পাঁচটার সময় পূর্বদিকে কুয়াশার ন্যাক় অস্পষ্ট কতকগুলা কালো! দাগ দেখা গেল। ছয়টার সময় আকাশে বেগ্ণী রঙের প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড মেঘ-রাশি; সেই মেঘ-ভারাক্রাস্ত আকাশের নীচে নাঁরিকেলবৃক্ষসমাচ্ছন্ন একটি নি্নভূমি দেখ! দিল। যতই আমরা অগ্রসর হইতে লাগিলাম, ততই উচ্চ, সরু বৃক্ষকাওসকল স্প্টরূপে লক্ষিত হইল। তাহার! একটু হেলিয়! সবেগে যেন আকাশ ফুঁড়িয়া উঠিয়াছে, এবং তালজাতীয় বৃক্ষের রীত্যন্থমারে শিরোদেশে শাখাপত্র বিস্তর করিয়াছে । মনে হয় যেন, একটি বিস্তৃত অরণ্য ফাগর-গর্ভ হইতে হঠাৎ সমুখিত হইয়াছে । এখনও উপকূল এক ক্রোশ দুরে, এখনও মাটি দেখ! যায় না-কেবলই ঘোর হরিৎ বর্ণ'রাশি; তীরভূমির নিকটে গিয়াও আর কিছু দেখা যায় নাঁ। কেবলমাত্র বিষুবরেখ!- প্রদেশ-স্থুলভ দেই উদ্দাম সরস উত্তিজ্জরাশি বর্ষা-সিঞ্চিত ভূমি হইতে সতেজে উত্থিত হইয়া! মুক্ত বাযুর আলিঙ্গনে শ্বকীয় হরিং কর্তল প্রারিত করিয়া আছে ।»
সেখানকার “ওরিএণ্টাল” নামক হোটেলে যুরোপীয় প্রত ও দেশীয় ভূত্যদিগের যেরূপ রকম-নকম গ্রন্থকার দেখিয়াছেন তাহ! অতিমুন্দররূপে বর্ণনা করিয়াছেন। “ওরিএণ্টাল হোটে- লের বাড়িটি প্রকাণ্ড ও বেশ ন্ুখাবাস্য। হোটেল-স্বামীর আদব্-কায়দা খুব ছুরস্তঃ ভূত্যদের প্রতি তিনি অল্প কথায় আমাকে যথাস্থানে স্থাপিত করিবার আজ্ঞা প্রচার করিলেন; তাহার সেই আজ্ঞা ভৃত্যেরা নীরবে নতমস্তকে গ্রহণ করিয়। আমাকে একটি মৌধ-ধবল বড় কামর1 দেখাইয়। দ্রিল। বেশী আম্বাব নাই-কেবল একটিমাত্র মশারি-টাঙ্গানো লোহার
কলিকাতা, দাজ্জিনিং ও দিংহল। ১১
খাট; আর, একটি বেতে-ছাওয়া গভীর-তল আরাম-চৌকি ) নিস্তব্ধ ও দুর্ধাপ্য সময়ে সেই চৌকির মধ্যে ভূবিয়া থাকিতে বেশ। কামরার চাদোয়া-ছাদে একটি. অদ্ভূত দাগ ; প্রথম একটি, গরে ছুই তিনটি অচল ক্ষুদ্র টিকৃটিকি তীক্ষ দৃষ্টি-সহকারে আমাকে নিরীক্ষণ করিতেছিল। ঘরের আশ-পাশের দীর্ঘ ঢাকা -বারাপায় ক্ষীণদেহ কোমলাঙ্গ বাঙ্গালী ও সিংহলী ভৃত্যের পাল নিঃশবে ও. ত্স্তভাঁবৰে যাতায়াত করিতেছে । দীর্ঘকায় গুরুভার-দেহ যুরে।- পীয়দিগের নিকট, এবং যে মকল প্রশান্ত ও পেশীবহুল ইংরাক্জ সারাহ্-পরিচ্ছদ পরিধান. করিয়া, ঝকৃবকে ফিল-দেওয়া সাদা কামিজ বুকের নিকট বাহির করিয়া, মানব অপেক্ষা যেন কোন উত্কষ্টতর ছুরধিগম্য জীব এইরূপ ভাণ ও ভাবভঙ্গী-সহকারে নেই বৃহৎ ভোজনশালায় প্রবেশ করিতেছিল,_-তাহাদিগের নিকট ভূত্যের! অত্যন্ত বিনয়াবনত।৮
কান্দিনগরে যাইবার সময়ে রেলগ্াড়িতে. ইঙ্গ-বঙ্গের স্তা় একজন ইংরাজ বেশধারী ইঙ্ষ-সিংহলীর সহিত গ্রন্থকারের আলাপ হয়। তিনি বলেন,__“কান্দিতে যাইবার জন্য ট্রে ধরিলাম, এবং গাড়ির মধ্যে একজন দিংহলী “জেন্টল্ম্যানের, সহিত আলাপ হইল। এই “জেন্টল্ম্যানটি” অতি সুসভ্য ; তাহার টুয়িডঃ-কাপড়ের ফতুয়ার পরিধানে কোন খুঁৎ নাই, এমন কি, একজন লগুনের 'ম্যাশর তাহ পরিয়া গর্বান্থুভৰ করিতে পারেন। তাহার বোদামের ছিদ্র “জাডিনিয়া” পুষ্পে ভূষিত ) তাহার প্দদ্ধয় কেবল, সাঁদ। সরু, কষা পায়জামার মধ্যে আবদ্ধ। তাহার মুখশ্রী। প্রায় ফুরোপীয়। বরং একজন ইটালিয়ান তাহার অপেক্ষা অধিক ক্ষীণদেহ, কোমলাঙ্গ ও রৌদ্রদপ্ধ। তীহার মুখা- বয়ব-সকল বহিরুনুখ 'ও স্থিময়। তাহার চকচকে শক্ত কালো
১২ ভারতবর্ষে।
কৌকুড়া দাড়ি। সওয়! ঘণ্টা নীরৰ্তার পর, যুরোগের রেল- গাড়িতে যেরূপ হইক। থাকে, সেইব্নপ কথাবার্ধা আরম্ত হইল । তিনি আমাকে দেশলাই-বাক্ন দিবার জন্ত উদ্যত হইলেন এবং বলিলেন, বড় গরয় হুইতেছে। ইংরাম্ধের দেশে শীতোত্তাপের কথা পাড়িয়াই আলাপের প্রথম স্বাত্রপাত্ত হয়, এবং ছুই জনে আলাপ করিতে হইলে, কথার আর্তে এই গৌরচন্দ্রিম। নিতা- স্তই আবশ্যক। এক্ষণে তিনি কতকগুলি নুস্প্ কথায় দিংহল দ্বীপের লোকসংখ্যা, শাসন প্রণালী ও ধন্ম আমাকে বুঝাইয়া দরিলেন। ক্রমশঃ তই তিনি বলিতে লাগিলেন, তাহার কথা- রার্তায় আমার ধারণা হইজ, ইংরাজি ছাঁচের ছাপ তাহাতে কতটা! গভীর বসিয়াছে। তিনি আশ্চর্য্য বিশুদ্ধতার সহিত ইংরাজি ভাবায় কথা কহেন--তাহাতে কোনপ্রকার অবথ উচ্চা- রণের টান আছে বলিয়া অনুভব হয়না। ইনি খুষ্টান্, কৌন্থুলি ও এখানকার ব্যবস্থাপক সভার সভ্য। ইনি বেরূপ দ্বণামিশ্রিত কপাকটাক্ষ-মহকারে সিংহলবাসী চায়াদিগের অজ্ঞত! ও পৌত্রলিকতার কথা বলিলেন, তাহা ইংরাঁজ উপনিবেশিকেরই মুখে শোভ। পায়। তবে, তিনি বপিলেন, পঞ্চাশ বতলরের মধ্যে অনেকটা পরিবর্তন হইবে) ইতিমধ্যেই রেল-গাড়ি অনেকটা ভাল কাজ করিয়াছে; লৌহ্পথের সম্মুখ হইতে অনভ্য প্রদেশসকল যেন পিছু হুটিরা যাইতেছে। কলম্বোতে আম্রা কলিকাতা, বোম্বাই ও বারাণনীর ন্ার বিশ্ববিগ্ঠালয় স্থাপন করিতে ইচ্ছুক হুইয়াছি এবং কিছুকাল পরে ষখন আমর! উপযুক্ত হইব, জাতীয় নির্ব্বাচন- মূলক পার্লামেণ্ট সভা প্রবন্তিত করিবারও আমাদের ইচ্ছা! আছে। তাহা অবশ্য অল্পে অন্নে ক্রমশঃ হ্ইবে। ব্রিটিশ-সাম্রাজ্য হইতে আমরা একেবারে বিচ্ছিন্ন হইতে চাহি না_কারণ ইংলগ্ডের
কলিকাতী, দাজ্জিলিং ও সিংহল। ১৩
প্রসাদেই আমর! সভ্যজগতে প্রবেশ করিতে সমর্থ হইয়াছি। আরও এই কথ! বলেন যে,,তিনি আধ্যজাতীয়” ; এবিষয়ে তাহার এতটা রব ধিশ্বাস, যেমন আমার ধরব বিশ্বাস আমি ফরাসিস। সুতরাং তনি আপনাকে সকল যুরোপীয়দিগের সমকক্ষ এবং অনেক মুরোপীয়দিগের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বলির মনে করেন। যাহাই হউক, ইনি বড় বেশী রকম ইংরেজ; প্রত্যক্ষ দেখা যায়, ইহার নিকট, ইংরাজই যেন মানবজাতির উত্কষ্ট আদশস্থল। কিন্তু ইংরাজের এতট। অবিকল কাপি' বা অনুলিপি আদলে স্বাভাবিক নহে। তাছাড়া, তাহার পরিহিত সাদ। পায়জামা এবং দেই এপিয়াবাসী- ন্থলভ মুখঞ্জার দু-এক পৌঁচ যাহা তাহার মুখে জীজল্যমান, তাহার সহিত এই দসস্ত মুরাপায় বাহাড়ম্বর একটু বিসদৃশ বলিয়! মনে হয়। আদল কথা, একজন লম্ষিতবেণী ও নীল রঙ্গের আল- থাল্লা-পরা চীনেম্যান্কে ভাল লাখে, তবু জ্যাকেট-পরা ও বিলাতী টুপীপর1 জাপানীকে ভাল লাগে না। এই সকল পীত ও কষণচর্ম্- ধারী লোকের! যেন্ূপ আন্চর্য্য নিপুণতার সহিত আমাদিগের অন্থকরণ ফরে তাহাতে একটু সন্দেহ জন্মে) মনে এই প্রশ্ন উপস্থিত হয়, এই অনুকরণ গুধু উপরি-উপরি ভাঙা-ভাদা, না, তাহ ছাড়াইয়া আরও কিছু দূর যায়?-_বাস্তবিক মূলে কি সেই মোগল কিম্বা কাফির রহন্ত প্রচ্ছন্ন নাই ?_-এই ব্যক্তি যেরূপে ঠাণ্ডাভাবে বাক্যোচ্চারণ করেন, ইহার চীল্-চোল্ যেরূপ খটুথটে ও অনম্য-_ ইনি যেরূপ সবিলম্ব আগ্রহ-শুগ্ত তাচ্ছিল্যভাবের ভঙ্গী-সহকারে সাদ! ঝিন্থুকের বাঝ্স হইতে পিগারেট চুরোট বাহির করেন,তাহাতে আমি ইহীর প্রত্যেক ধরণধারণে আশ্চর্য্য হইতেছি।”
গ্রন্থকার পগ্ডিচারিতে যখন পৌছিলেন, তখন তাহার একজন ৃহ্যাত্রী ফরাসী-গবর্ণমে টর উচ্চপদস্থ কর্মচারী জাহাজ হইতে
১৪ ভারতবধষে |
নামিতেছিলেন। এই কর্মচারীকে অভ্যর্থনা করিবার জন্ত পঙ্ডচারির দেশীয় ও ফু/রাপীয় তাবৎ অন্ত্ান্ত লোক সমবেত হইয়াছিল । আমাদের দেশে গবর্ণর প্রভৃতিকে অভার্থনা করিবার সময় যেরূপ গৈন্তাশ্রেণী রাজপথে দীড় করাইয়া দিয়া, বিজয়তোর ণ নির্মাণ করিয়া মহাসমারোহে নানা অনুষ্ঠান করা হয়, এখানেও তৎ্সমস্ত অনুষ্ঠিত হইয়াছিল- তবে, প্ডিচাঁরিতে ফরাসী গবর্ণ, মেণ্টের তিন শত মাত্র সৈন্ভ। এই তিন শত সৈন্ত লইন্বা অলীক যুদ্ধ প্রদর্শন কর! নিতান্ত ছেলেখেলা! বলিয়া মনে হয়। গ্রন্থকার বিজ্রপের ভাঁবে বলেন যে, এই সমারোহের সময়ে & দমকল সৈনি- কেরা বন্দুকের গু'তার দ্বার! দেশীয় লোকদ্িগকে সরাইয়া দিতে ও যুরোপীয় দেখিলেই সমন্ত্রম পথ ছাড়িয়া দিতে ত্রুটি করে নাই। সেই নবাগত উচ্চপদস্থ কর্মচারীর নিকট পগ্ডিচারির বনু মন্্ান্ত ব্যক্তিদিগের দস্তর-মত পরিচয় দাঁন এবং রাঁজকন্মচারীদিগের সম্মিত বদনমণ্ডলের ভাব প্রভৃতি গ্রন্থকার বর্ণনা! করিয়াছেন । যখন সেই পরিচয়দানের অনুষ্ঠান হইতেছিল, মহ! জাঁকজমক করিয়া একজন দেশীয় মন্তাস্ত ব্যক্তি নবাগত কর্মচারীর নিকট আপিয়! মস্তক নত করিল। ইহার হস্তে একটি রৌপ্-দগড ছিল। পূর্বকালের ইংরাজ-ফরাসাধুদ্ধে, ফরাসীদিগের যখন কামানের গোলা ফুরাইয়া যায়, তখন এই ব্যক্তির পূর্বপুরুষের! রাশি-ব্রাশি খনিজ স্বর্ণপিও্ গোলারূপে ব্যবহার করিবার জন্ত ফরাদীদিগকে দান করিয়াছিল। তাই তাহার প্রতিদান-স্বরূপ ফরানী গবর্ণমে্ট তীহার সম্মানার্থ একটি রৌপ্য'দণ্ড বকৃসিস্ করেন। ইহা নিংস্বার্থ রাঁজভক্তির একটি জলন্ত দৃষ্টান্ত ।
গ্রন্থকার এদেশীর স্ত্রীলৌকদের গঠন-সম্বন্ধে এইরূপ বলেন। “এই মকল স্ত্রীলোক সাঁদাধিধা অথচ জমকাল পরিচ্ছদ পরিধান
কলিকাত।) দাঞ্জিলিং ও দিংহল। ১৫
করে। ইহীরা খন চলা-কেরা করে তখন যেমন চক্ষের তৃপ্তি হয়, এমন আর কিছুতে হয় না। মাথায় পিতলের ঘড়া লইয়। যেরূপ ইহারা পশ্চাতে একটু হেলিয় সটান-ভাবে দণ্ডায়মান হয়, তাহাতে তাহাদের সুন্দর গঠন-রেখাগকল দিব্য প্রকাশ পায়। বিচিত্ররঙের উজ্জলত! সত্বেও, উহাদিগকে দেখিয়! পুরাকালের গ্রীক রমণীদিগকে মনে গড়ে। দেই একই প্রস্তরমূন্তিবৎ দেহভঙ্গী, সেই একই অঙ্ভঙ্গীর প্রশান্ত তাঁব__সেই একই মুক্ত বাযুতে জীবন- যাপন--মেই একই ছ্োট-ছোট মুন্তিকা-নির্মিত ঘরে বাস। এই সকল ঘর নিয়, ঠা, সাদা ধব্ধবে, চৌকোণা। ও আসবাব-বির- হিত) এবং তাহাদের ছারায় বসির রূমণীগণ স্থৃতাকাট কার্যে নিযুক্ত |”
গ্রন্থকার পঞিচারিতে ডুপ্নের প্রস্তরমৃত্তি দেখিয়াছিলেন, এবং তাহার উল্লেখ করিয়া তিনি এই কথ! বলেন, “একজন ইংরাজ আমাকে বলেন, ডরগ্ন একজন খ্যাতনামা ব্ক্তি-তিনি আমাদের কিছু কষ্ট দিয়া গিয়াছেন। শীঘান্ত-গ্রাদেশের চতুর্দিকে শুন্ধ-মাদী- য়ের আড্ডা স্থাপন করিতে আমরা বাধ্য হইয়া, এবং আমাদের যত চোর মব পলাইয়| তোমাদের ওখানে বাদ করে। এই উপ- নিবেশটি রাখিয়া তোমাদের কি লাভ? একজন ফরাদিন্ তাহাৰ উত্তরে এই কথা বলেন,-_লাভ আর কিছুই নয়, ইহার অর্থ এই মাত্র, ভারতবর্ষে ডূপ্পের একটি প্রস্তরমু্তি থাকা আবশ্যক এবং তাহা উহার নিজ স্থানেই স্থাপিত হওয়া! গ্রার্থনীয়।”
১৬ 'ভারতবর্ষেন
পিংহলে বৌদ্ধধর্ম । (৩)
ফরাঁসিস্ পর্যটক আন্দে শেত্রিয়ো! পিংহলবাসী বৌদ্ধদিগের আচার ব্যবহার ও ধন্মান্ষ্ঠানের বিষয় যাহা বর্ণনা করিয়াছেন, তাহা হইতে বৌদ্ধধর্মের নারাংশ বেশ অল্পের মধ্যে জানা যায়। তিনি বলেন, “এই কান্দি পিংহলের একটা পুরাতন নগর-- সিংহল-রাজদিগের পুরাতন রাছধানী। এই স্থানে বড় বড় তালবুক্ষের নীচে কুষ্জাত লিল একটি সরোবর আছে-_তাহার ধারে রাজাদিগের পুরাতন প্রাসাদ অবস্থিত । প্রাসাদের সন্গি- কট, সেই মঝাল-প্রতিবিস্বিত কৃষ্ণ সরোবরের ধাঁরে একটি পুরা- তন বৌদ্ধ মন্দির প্রতিষ্ঠিত । মন্দিরের দ্বারদেশে যে তিনটি বিকট অদ্ভুত মূর্তি রহিয়াছে তাহার অর্থ কি? আর, এই বৌদ্ধ পুরোহিতের, যাহারা মন্দিরের মর্র-শোভিত দালানের উপর দিয় ক্রমাগত ঘাতায়াত করিতেছে, ইহারা না-জানি সমস্ত দিন কি চিন্তা করে? মুণ্ডিত-মন্তক, থালি-পা, গেরুয়া'বসনের মধ্য হইতে একট হাত বাছির-করা, এই বৌদ্ধ পুরোহিতের মন্দিরের বাহির-দালানে নিঃশব্দে গমনাগমন করিতেছে । ইহাদের মুখে একটি রহদ্যময় অবর্ণনায় মধুর হাস্য সর্বদাই বিরাজমান। আমার পাণ্ডা আমাকে মন্দিরের কেন্ত্রবন্তী একটি বৃহ প্রাঙ্গনে লইয়! গেল। যে বো*বুক্ষ ধানমগ্র শাক্যমুনিকে পাঁচ বৎসর কাল ছায়] ধান করিয়াছিল, তাহারই একটি চারা এই প্রাঙ্গনে প্রতি- চিত। এই বৃক্ষের তলদেশে আমি নীত হইলাঁম। স্ুধীরে মস্তক ঈষৎ অবনত করিয়া সেই পাণ্ডা আমাকে সেই বৃক্ষ হইতে একটি পাতা ছিড়িয়া দিল। কান্দিমঠের মঠধারী আচার্ধা
মিংহলে বৌদ্ধধর্ম ৫
শ্ীনুমঙ্ষন অত্যন্ত বিজ্ঞ ও স্ুপঙ্ডিত; ইনি আমাদের যুরোপের সমস্ত বিষয় জানিনার জন্ত উত্স্থক এবং আমাদের চিন্তাশীল লেখকদিগের বিজ্ঞানবাদ এবং দর্শন ও নীতিতন্থের ভাব দেখিয়া মনে করেন যে, তাহারা বৌদ্ধধর্মের অনেকটা নিকটবর্তী হইয়া- ছেন। আবঘণ্টা কাল ইনি আমার সহিত বাক্যালাপ করিলেন ও বৌদ্ধধর্মের প্রধান প্রধান গ্রন্থনকলের উল্লেখ করিলেন। বৌদ্ধেরা কিরূপে জীবনবাত্র! নির্বাহ করে তাহার কতকট। ভাৰ তাহার কথাবার্তায় জানিতে পারা গেল। |
বৌদ্ধদিগের মধ্যে হই শ্রেণী; এক অভিনবব্বতী সামান্ত ভিক্ষু, জার এক বৌদ্ধপুরোহিত শ্রমণ--এই শ্রমণেরা আপনার ইচ্ছাকে বশীভূত কন্সিতে শরিখিয়াছে। এই আত্মবশীকরণ-রূপ চরম লক্ষ্য সাধন করিবার জন্য ইহারা “পিতৃমোক্ষ” নামক গ্রন্থের উপদেশ অন্ুদরণ করিয়া থাকে । ইহা বৌদ্ধধন্ম্ের একটি পুরাতন ্ন্থ। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা আটটি বস্ত গ্রহণ করিতে পারে; তিনথানি পরিধান বন্ত্রর একটি কটাবন্ধ, একটি কমণডলু, একটি ক্ষুর, একটি ছু'চ, পানীয় হুইতে কীটাদি জীব ছাঁকিয়া৷ ফেলিবার জন্ত একটি ছাকুনি। মঠের অত্যন্তরে এই দারিদ্র্-ব্রতের খু'টি- নাট দমস্ত নিয়ন বথাশান্ত্র পরিপালিত হয়। নবব্রতী ভিক্ষু অরুণোদয়ের পূর্বে শা হইতে গাত্রোখান করে, নিজ পরি ধানবস্্ব ধৌত করে, মন্দিরের দালান ও বোধী বৃক্ষের (বট) চতুপপার্্থ ভূমি ঝট দেয়, সমস্ত দিনের পানীয় জল উত্তোলন করিস তাহা ছাঁকিয়া রাখে) অবশেষে একটি নিজ্জন স্থানে গিয়া ধ্যান করে। পবিত্র বোধা-ুক্ষের সন্বুথেঞপুষ্পাঞ্জলি প্রদান কররয়া বুদ্ধদেবের মহৎ গুণসকল এবং নিজের ক্রুটি ও দোষের বিষয় চিন্তা করে; পরে, কমগুলু হস্তে লইয়., নিজ গুরুর
ভারতবর্ষে ।
সমভিব্যাহারে তিক্ষার্থ বহির্গত হয়। উহার মুখ ফুটিয়া কিছুই চাহে না-_কেবল লোকের দ্বারে স্তব্ধবভাবে ধ্াড়াইয়1 থাকে। গৃহে প্রত্যাগত হইয়।,!ুনবব্রতী তিক্ষু গুরুর চরণ প্রক্ষালন করে, কম- গুলু ধোত করে, চাউল পিদ্ধ করে এবং বুদ্ধের বিষয়-_বুদ্ধের দয়! ও ওঁদার্য্ের বিষয় চিন্তা করে। এক ঘণ্ট। পরে, একটি প্রদীপ আলাইয়। শিক্ষ-গৃহে প্রবেশ করে-__পুরাতন পাখুলিপির নকল করে, কিম্বা গুরুর পদতলে বসিয়া তাহার উপদেশ-বাক্য শ্রবণ করে এবং দিনের মধ্যে যে সকল দোষ করিয়াছে তাহা তাহার নিকট প্রকাশ করে। পুরোহিত-শ্রেণীর বৌদ্ধদিগকে কোনপ্রকার শারীরিক শ্রম করিতে হয় না) তাহারা ধাঁন ধারণায় অনেকট। ॥ময় নিয়োগ করিতে পারে; কিন্তু তাহার প্রার্থনা করে না) কারণ, বৌদ্ধধর্ম, কোন দেবতার সাহাধ্য চাহে না। ছুঃথকষ্ট ইইতে অব্যাহতি পাইবার জন্য উহারা নিজের উপরেই নির্ভর করে। মস্পিনোজা ও ্টোয়িক-সম্প্রদায় যে উপায় অবলম্বন করিতে উপদেশ দিয়াছেন ইহারাও সেই উপায় অবলম্বন করিয়। থাকে। সর্বপ্রকার জীবের সমষ্টিকে ধ্যান করিবার জন্য ইহার! ক্ষণস্থায়ী 'আমি,-কে ভুলিয়া! যায়। গাঁচ প্রকার ধ্যানের দ্বারা ইহারা সমস্ত জগংকে চিন্তা করে। প্রথম ধ্যান, “মুক্তি-ভাঁবনা”। সমস্ত কষ্ট, রিপুর উদ্বেগ, অনৎ বান! হইতে মুক্ত হইলে আমি যেমন নিজে সী হইতে পারি বলিয়! মনে করি, সেইরূপ সমস্ত জগতের জীবঞ্র প্রকারে সুখী হউক্ এই কামন1 করা প্রথম ধ্যানের বিষয়। এমন কি, শক্র হইলেও কেবল তাহার গুণের ভাগ গ্রহণ করিয়1, আমি ষে স্ুঞ্জ নিজে চাহি, দে সুখ যেন সেও পায় এইরূপ কামন! অকপট ভাবে করিতে হইবে।
দ্বিতীয় ধ্যান -'করুণা ভাবনা, | সমস্ত জীব যে কষ্টনন্তরণ।
সিংহলে বৌদ্ধধর্ম । ১৯
ভোগ করিতেছে তাহ! মনে করিয়া, আপনার অন্তরে সেই কষ্ট জাগ্রত করিয়া তুলিতে হইবে _-ইহাই দ্বিতীয় ধ্যানের বিষয়।
তৃতীয় ধ্যান-_“মুদিত-ভাবন1 ॥ যে সকল্প জীব স্থখী, কিন্বা মনে করে তাহার] সখী, তাহাদের বিষয় চিন্তা করিয়া এইরূপ কামন! করিতে হইবে ষাহাতে অন্টেরাও তাহাদের মত সুখী হয়, এবং তাহাদের স্থথে যাহাতে আপনাকেও সুখী মনে করিতে পারি এইরূপ চেষ্টা করিতে হইবে ।
চতুর্থ ধ্যান-অণ্ডভ-ভাবন1। শরীরের হীনতা, অশুচিতা, রোগের ভীষণ যন্ত্রণাদকল মনে করিয়! এইরূপ ভাবিতে হইবে £-- সাগর-সন্ভুত ফেনপুঞ্জের হ্যায় এ সমস্ত ছুঃখকষ্ট তিরোহিত হয়, অনস্ত জন্মমৃত্যুর পারম্পর্ধা বশতই উহাদের অস্তিত্ব, এই জন্ম- মৃত্যুর পারম্পর্য্ে বান্তবিকতা৷ কিছুই নাই-_-উহা! অলীক আবির্ভাব মাত্র । শেষ ধ্যান_-'উপেক্ষা-ভাবন।+ | যাহা কিছু মানুষ ভালমন্ৰ বলিয়া মনে করে, যাহা কিছু ক্ষণনস্থায়ী,_স্বতন্তরতা, পরতন্ত্রতা, প্রেম ছেষ, প্রশ্ব্যয দারিদ্রা, যশ অপযশ, রপযৌবন, জরা. ও রোগ, এই সমস্ত, নিতান্ত উপেক্ষার সহিত, সম্পূর্ণ প্রশান্তভাবে চিন্তা করিবে। -* ৮৮৮ কান্দি নগরের যতই নিকটবন্তী হইতে লাগিলাম ততই দেখি পথ লোকে লোকাঁকীণ্। রাত্রিকালে, স্্রীপুরুষ দলে দলে নগরাভিমুখে আগ্রহের সহিত গমন করিতেছে । নিস্তন্ধতার মধ্যে বৌদ্ধ পুরোহিত এক প্রকার সুর করিয়া! জঙ্গলের ও ঘরের লোৌকদিগকে ডাঁকিতেছে, আর অমনি লোকসকল পিল্- পিল্ করিয়া কোঁথ! হইতে যে বাহির হইতেছে বোঝা ফায় না-_ বড় বড়, গাছে ঢাকা, ঝোপ্ঝাপের মধ্যে ফেসকল' গৃহ ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত রহিয়াছে, মনে হয়, যেন তাঁহা' হইতেই তাহারা নির্গত হইন্তেছে। যে সকল ওক্তের দল নিস্তব্ধতাঁবে পুর্পভার হস্তে
২০ ভারতবর্ষে ।
লইয়া চলিতেছিল, সেই গভীর অন্ধকার রাত্রে আমিও অৃশ্য- ভাবে তাহাদের সঙ্গে মিশিক় গেলাম। কাসর ঘণ্টার রবে নগর পরিপূর্ণতা ছাড়া আর কোন শব শোন] যায় না। সেই কৃষ্ণ সরোবরের ধারে, মন্দিরের বৃহৎ দ্বারের নীচে সেই বিকট মুর্তিগুলি চিরজাগ্রত, এবং মন্দ্রস্থিত উদ্যানের প্রবেশ-পথে পুরোহিতের। নিস্তন্ধভাবে দণ্ডায়মান ও কোনপ্রকার অঙ্গত্গী না৷ করিয়া! নীরবে ভক্তদিগের পুষ্পাঞ্জলি গ্রহণ করিতেছে । একট। রৌপ্যময় গরাদের নীচে দিয়া আমরা চপিলাম এবং তৎপরেই একটা ছায়াময় বড় দালানের মধ্যে গিয়! পড়িলাম। সেখানে ছোট ছোট পবিত্র দীপ- সকল একপ্রকার রহস্যময় অস্ফুট আলোক বিকীর্চ করিতেছে। শত শত ধৃপাধার হইতে সুগন্ধী নীলাভ ধৃমরাশি উদ্ধে প্রসারিত হইয়। স্থিরভাবে উপরে ভাসিতেছে। এই গুরুভার, নিদ্রাকর্ষক ধূপধূমের গ্রভাবে সমস্ত দৃশ্যটি কেমন এক প্রকার অবাস্তব অল কিক আকার ধারণ করিয়াছে। অন্ধকারের মধ্যে বুদ্ধদেবের বিবিধ মৃত্তি হইতে ছায়া পড়িরা ইতস্ততঃ অর্দন্কুট ভাবে দেখা যাইতেছে । কোন বুন্দমুত্তি শয়ান, কোন বুদ্ধমুত্তি আসীন--সকলের তলদেশে পুষ্পরাশি বিকার্ণ। আমরা একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন সিড়ি দিয়া উঠিলাম, তাহার ধারসকল অগ্নিকুণ্-নিক্ষিপ্ত কোলাহলময় দ্রানবদৈত্যের চিত্রে চিত্রিত। উপরে একটি রৌপ্যময় গরাদের গশ্চাতে পুরোহিতের দর্ডায়মান_-ভক্তেরা তাহাদের পুম্পোপহার একটি বেদীর উপর রাখিতেছে, আর সেই পুষ্পোপহার পুরোহিতের! গ্রহণ করিতেছে । সেই নীরব তক্তদলের সম্মুখে, একটি সুন্দর যুবক পুপোপহাবুহন্তে স্থিরভাবে দণ্ডায়মান। মূর্তির সম্মুখে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করিয়া মে অনেকবার নতাঁশর হইল। এইথার অদ্ধনত হইয়া বঙ্গের উপর ইন্তপুগণ স্থাপন করিয়া খানিকটা স্থির-
সিংহলে বৌদ্ধধর্ম । ২১
তাবে রহিল। তাহার স্ুবক্র সুন্দর ওষ্ঠে ও তাহার দীর্ঘায়ত সুন্দর নেত্রে, রহস্যময় মধুর প্রশান্ত হাস্য বিরাজমান | *** ৮ নিজ্ত- বত| আরও ধেন গুরুভার হইয়া উঠিল) কিয়ৎকাল পরেই সহস! তুরী ভেরীর গভীর নিনাদে সেই নিস্তব্ধতা ভঙ্গ হইল। কিন্তু জনতণর মধ্য হইতে কোন শব্ধ নাই। পবিত্র দীপাবলীর নিষ্নে, পুষ্পরাঁশির পশ্চাতে, পুরোহিতের গম্ভীর ভাবে দণ্ডায়মান ।
মন্দিরের বিজন অন্তরতম প্রদেশে, পুরোহিতদিগের পশ্চাতে পবিত্র স্থানে, যোগাসনে উপবিষ্ট একটি বৃহৎ স্কট কমূর্তি স্থাণিত__ তাহার অবয়ব-রেখানকণ অস্পষ্ট । মূর্তিটি এপ স্বচ্ছ যে, উহ্থাকে উগছায়া বলিয়া মনে হয়_মনে হয় বেন জড়ভাব হইতে মুক্ত কোন অশরীরী আত্মা। যে মহাপুরুষ কঠোর সমাধিবলে আপন এক্তম।ংসের বন্ধন, কামনার বন্ধন সকল ছিন্ন করিয়াছিলেন, ইহা তাহারই উপযুক্ত মূর্তি বটে! এই মুর্তি জনদাধারণকে শাসন করিতেছে, অথচ কোলাহলময় মন্ুষ্যের জনতা হইতে দূরে অবস্থিত_-এবং ইহার স্বচ্ছ ওট্ঠাধরে থে অন্ত মধুর হাস্য বিরাজ- মান তাহাতে মনে হয়, ষাহার এই মুর্তি তিনি চিরকালের মত শান্ত-ধামে প্রবেশ করিয়াছেন।
যতই আমি এই দেশ ও দেশের লোকদ্িগকে দেখিতেছি ততই যেন আমি এই ধর্শ ও ধর্মনীতি বুঝিতে পারিতেছি। আজ যাহা? আমাদের যুরোপীয় পগ্ডিতেরা বলিতেছেন, ত্রয়োবিংশতি শতাব্দী হইতে বৌদ্ধমুনিরা তাহাই শিক্ষা দিয়া আসিতেছেন। তাহারা বলেন, কিছুই নাই--সকলই হইতেছে। এই জগৎ ক্ষণস্থায়ী আবির্ভাবের প্রবাহমাত্র--পরিবর্তন ব্যতীত ইহাতে আর কিছুই স্থায়ী নহে। পৃথিবী, আকাশ, অষ্টাদশ নরক, দানবগণ ও তাহা- দের নিবাসভূমি নিকৃষ্ট পোক'সকল, সকলই নদীর জগের ন্যায়
২২ ভারতবষে ।
প্রবহমীন। একটার পর আর একট1_-এইরূপ ক্রমান্বয়ে এক কালচক্রের পর আর এক কালচক্র, এক যুগের পর যুগান্তর পুনরাবৃত্ত হইতেছে। এই শ্রেণীপরম্পরা অনন্ত-_ইহ1] কন্মিন্ কালেও আরম্ত হয় নাই, এবং কম্মিন কালেও ইহার শেষ হইবে না। এই জগতের মধো “মন্তব্য, পদার্থটা কি?-চিন্তাশীল জীব বটে, কিন্তু অন্ান্ত জীবেরই মত, অর্থাৎ কিছুকালের জন্ত কতকগুপি শক্তি একাধারে সমবেত হইয়াছে-_কিছুকাল পরেই উহা বিক্ষিপ্ত ও বিলীন হইয়া যাইবে। মমন্ুষ্য” কি!?_এমন কতকগুলি বৃত্তি, ভাব, কামনা, ইচ্ছা, ও সং- স্কারেগ সমষ্টিমাত্র যাহাদিগের মধ্যে কিছুকালের জন্য যোগ ও শৃঙ্খলা রক্ষিত হইতেছে । শরারের মধ্যেও এইরূপ কোষাণু সকল অনুক্ষণ মরিতেছে, জন্মিতেছে, অথচ সমগ্র শরীরের গঠন কিছুকাল সমান ভাবেই থাকিতেছে। মন্তুষোর মধ্যে কিছুই স্থায়ী নহে। জীবনের ঘটনাসকল-_ধাহা কোন নির্দিষ্ট নিরমানুলারে একত্র হইতেছে ও পরস্পরকে অন্ুদরণ করিতেছে এবং যাঁহ। অইয়াই মনুষ্যের ব্যক্তিত্ব-সেই ঘটনাগুলিও স্থায়ী নহে) কিন্বা। যে নিদ্দিঘ নিয়মে এই ঘটনাগুলি ঘটিতেছে তাহারও বৃদ্ধি হ্রাস হইয়! ধীরে ধীরে পরিবর্তন হইতেছে । যে সকল উপাদানের সমষ্টি লইয় প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব তাহ! পঞ্চস্কন্ধে বিভক্ত ; এবং বৌদ্ধের' তন্ন তন্ন করিয়। দেখাইয়া! দ্রেন যে, এই স্বন্ধগুলির মধ্যে কোন স্বন্ধই অথবা কোন উপাদানই স্থায়ী নহে। প্রথম স্ন্ধে ভৌতিক পদার্থের গুণসমূহ-_যথা বিস্তুতি, গভীরতা, বর্ণ ইত্যাদি; ইহার! সাগরোৎপন্ন ফেন্রাশির ন্যান্ধ উৎপন্ন হইতেছে ও উৎপন্ন হইয়াই পুনর্বার তিরোহিত হইতেছে । দ্বিতীক্ষ স্কন্ধে ইন্দ্রিয় বোধদমূহ-_ ইহারাঁও জলোপরি-নৃত্যশীল বিশ্ববৎ। তৃতীয় স্কন্ধে জ্ঞান ও
সিংহলে বৌদ্ধধর্ম! ২৩
বুদ্ধিবৃত্তি; ইহারাও দক্ষিণ প্রদেশের অনিশ্চিত মুগতৃষ্ণিকাসম চতুর্থ স্কন্ধে মানসিক ও নৈতিক সংস্কারসমূহ__-ইহা কদলীকাণ্ডের হ্তায় অপার। শেৰ কথা, চিস্তামকল উপছায়ামাত্র_পরন্রজাপিক মায়ামাত্র । গৌতম বলিলেন, হে ভিক্ষুগণ, ভিন্ন ভিন্ন মতাবলম্বী পণ্ডিতেরা থে ভাবেই আম্মাকে চিন্তা করুন না কেন, এই পঞ্চ স্কন্ধের অন্ততম স্কন্ধকে, কিন্বা তাহাদের দমষ্টকেই তাহারা আত। বলিয়া কল্পনা করেন। এই প্রকারে, হে ভিক্ষগণ, যাহারা বৌদ্ধ হয় নাই, কিন্ব1! যাহারা বৌদ্ধধন্ম বুঝিতে পারে না, তাহার! কখন মনে করে, আম্মা ও ভৌতিক গুণ একই ; কখনও বা মনে করে, আত্ম! ও ইন্রিয়-বাবধ একই ) এই গ্রকারে আত্মাকে অপর শেষ তিনটি ক্কন্ধরূপেও কল্পন। করিয়া খাকে। এই প্রকারে, একটার পর আর একটা! স্বদ্ধ কল্পনা করিয়া, অবশেষে এই সংস্কারটিতে উপনীত হয়--সে কি?- না, আমি আছি, আমার আত্ম আছে; আমি থাকিব কিম্বা আম থাকিব না) আমার ভৌতিক গুণ থাকিবে কিন্বা থাকিবে না? মামার সংস্কার সকল থাকিবে কিন্ব। থাকিবে না। কিন্ক বুদ্ধের জ্ঞানবান শিষ্েরা, পঞ্চেক্িয়ের অধিকারী হইলেও তাহার অজ্ঞান হইতে মুক্ত এবং তাহারা সত্যে উপনীত হইয়াছেন। সেইজন্য তাহাদের সংস্কার অন্তরূপ ; -আঁমি আছি, আমার আত্মা আছে, আমি থাকিব কিম্বা থাকিব না, এবন্বধ সংস্কার তাহাদের মানসক্ষেত্রে উপস্থিত হয় না ডেকাট বলিয়া- ছেন, আমি চিন্তা করিতেছি, অতএব আমি আছি। কিন্তু বুদ্ধদেব হইলে এইরূপ বলিতেন ; -আমি চিন্তা করিতেছি, অতএব আমি নাই। কারণ, চিন্তা কাহাকে বলে? কতকগুলি পরিবর্তনপর- ম্পরা_-বিভিন্ন ঘটনার পারম্পর্ধ্য ভিন্ন ইহা আর্ কিছুই নহে। আধুনিক মন্তত্ববিৎ পণ্ডি নদিগের ত এই মত। ইংলণ্ডের জন
২৪ ভারতবতর্ষ।
&য়র্ট নিল এবং ফাঁন্সের টেন এই বিষয় অন্ধুশীলন করিয়। এই স্থির করিয়াছেন যে, ইহা একপ্রকার কল-কৌশল যাহাতে করিয়া “আমি” বলিয়া একট। পদার্থ আমাদের মধ্যে আছে এইরূপ বিভ্রম উৎপন্ন হয়। বৌদ্ধেরা বলেন, এই ভ্রমটি সর্বাপেক্ষা হানিজনক, আমাদের ফাঁদে ফেলিবার একটি প্রধান উপায় ; কারণ এই বন্ধনেই আমর! বিষয়ের সহিত আবদ্ধ আছি--এই মুগতৃষ্তাই - আমাদিগকে শান্তি ও উপেক্ষা হইতে বিচ্ছন্ন করিয়া কার্্যক্ষেত্রে নিক্ষেপ করে ও আমাদিগকে ক্রমাগত স্মুখ ঠেলিয়! লইয়া! যায়। বৌদ্ধের! ইহাকে ব্যক্তিত্বর্ূপ বিভ্রম বলেন।
একবার বদি স্বীকার করা! যাঁর যে, এই জগৎ কেবল ইন্দ্রিয়া- ভাসের প্রবাহমাত্র, আমাদের অন্তরে কিম্বা বাহিরে কোন পদার্থই স্থায়ী নহে, তখন আমাদের কর্তব্য ও সহজে স্থিরীকৃত হইতে পারে। ঘযেণআমি' এত গুরুতব বলিয়া আমার নিকট প্রতীয়মান হইত এক্ষণে মামি তাহাকে বিভ্রম বলিয়া! জানিতেছি | ইহা জানিবামার, মনুষ্য মুক্তিনাত করে_এই “আমি' চিরকাল পুষিয়! রাখিবার জন্ত দে আর লালায়িত হয় না_সে আর কোন চেষ্টা করে না, কামনা! করে না, তাহার জীবন-ৃষ্ণ। চলিয়! যায়, সে দুঃখ হইতে মুক্ত হয়।--কারণ, দুঃখ কি?- ব্যক্তিগত অস্তিত্ব হইতেই দুঃখ উৎপন্ন হয়। আর, জন্ম, বাদ্ধকা, রোগ, মৃত্যু প্রভৃতি ঘটনাগুলি লইরাই আমাদের ব্যক্তিত্ব। মাস্', এই নকল ঘ)নার় কেন আমা- দের দুঃখ উৎপন্ন হয়? কারণ, আমিরূপ বিভ্রম হইতেই আমাদের বাচিবার ইচ্ছ। হয়, ভয় ও আকাঙ্ষা উৎপন্ন হয়, জর! মৃত্য প্রভৃতি দূরীক্কৃত করিয়া তাহার বিপরীত বিষয় লাভের অগ্িলাষ হয়। এই অন্তিত্বের মন্ুরাগ বদি আমাদের অন্তর হইতে নিশ্মুল করিয়া ফেলিতে পারি; ইচ্ছা কর্ধ চিন্তা হইতে বিরত হইয়া! পরি.
সিংছলে বৌদ্ধধর্ম । ২৪
ধর্জনের সার্তৌমিক নিয়মের হাত হইতে যদি এড়াইতে পারি, তাহা হইলে “পরিবর্তনমূলক ছুংখ আর আমারিগের নিকট আসিতে পারে না। “যে বাক্তি এই দ্বণিত্ জীবন-তৃষ্ণাকে দমন করিতে পারে, পদ্মপত্রস্থ জলবিন্দুবৎ দুঃখ ভাহা হইতে সহজে অপসারিত হয়।,
এই পুর্ণ অবস্থা লাভের পন্থাগুলি এই )১-_প্রথম, আত্ম- বিভ্রম ও ক্রিয়াকলাপ অনুষ্ঠানের বিশ্বানকে বিনাশ কর1। দ্বিতীয়, মমস্ত রিপু, সমস্ত বিদ্বেষ, সমস্ত মায়া-মোহ বিনাশ কর1) তৃতীয়, আত্মান্তরাগের কোন চিহ্মাত্র না রাখা ) চতুর্থ, ধ্যানবলে মুক্তিলাভ করিয়। ভৌতিক ও আধ্যাত্মিক সর্বপ্রকার অন্তিত্বেব কামন| হইতে বিরত হওয়া । এই স্কুলে উপনীত হইতে পারিলেই মনুষ্য যুক্ত হয়। আপনার উপর তাহার আর আস্থা থাকে না, আকর্ষণ থাকে না, অন্তের কাঁজে আপনাকে সমর্পণ করিতে পারে ওদার্ঘ্য, পরছুংখকাতরতা তাহার মনকে অধিকার করে। যেমন, মাতা, আপনার প্রাণ পর্্স্ত পণ করিয়া আপনার একমাত্র সন্তানকে রক্ষ। করে, সেইরূপ মে বিশ্বজনীন প্রেমের--অসীম পরান্থরাগের অনুণীলন করে। এই প্রেম তাহার চতুর্দিকে, তাহার উদ্ধে+ তাহার : নিয়ে বিকশিত হইয়া উঠে-__সেই বিশুদ্ধ প্রেম যাহার নহিত স্বার্থের কোন সম্পর্ক নাই। জাগিয়া গ্লাকুক, ধাড়াইয়া থাকুক, বসিয়া থাকুক, কাধ্য করুক, অথবা শয়ন করুক, সকল অবস্থাতেই সকল সময়েই এই ভাবটি তাহার মনে দৃঁ়র্ূপে নিবদ্ধ থাকে ।+--“তাহার ইন্দ্রিয় সকল প্রশান্ত হইয়াছে ; বশীভূত অশ্বের স্তায়, সে গর্ব হইতে মুক্ত_-তার অজ্ঞান-মলা বিধৌত-_দেছের উত্তেজনা, জীবনের উত্তেজন। তাহার আর অনুতব হয় না, দেবতারাও তাহার অবস্থাকে ঈর্ষা করেন “যাহার চরিত্র সবল, সে ধরার ন্তা্ অচল--স্তন্তের হ্ঠার অটল--স্ফটিক-ন্যচ্ছ সরোবরের হ্যা? গ্রশান্ত_
হ্গ তারতবর্ষে।
তাহার আর গুনর্জন নাই।/ ঘাঁহারা জান-যোগে মুক্ত হইয়া গ্রশান্ত তাহাদের বাক্য, প্রশীস্ত তাহাদের কার্ধ্য। তাহার! পর- জন্মের জন্য আকাজ্ম। করে না। জীবনের আকর্ষণ তিরোহিত হওয়ায় এবং অন্য কোন কামনা মনে উদিত না হওয়ায়, জ্ঞানীর তৈলবিরহিত দীপের ন্যায় নির্বাণ প্রাপ্ত হন।” ইহাই বৌদ্ধদিগের চরম স্থের অবস্থা। শীক্যমুনি তীহার পূর্ববর্তী ব্রাহ্মণ আচার্য্য, দিগের স্তা়, জগৎকে তলাইয়। দেখিবার চেষ্টা করিয়াছেন-যতই তলাইয়া দেখেন হাতে কিছুই ঠেকে নাহত্ত হইতে যেন সব সরিয়া যাঁয়, গলিয়! যায়; অবশেষে তাহার দৃঢ়দুষ্টিতে কতকটা শূন্য সাপটিয়া ধরিলেন। চাঁরিদিকেই মায়া বিভ্রম বিভাদিত-_চারি- দিকেই ঘটনা মকলের চঞ্চল আবর্ত__কিছুই স্থায়ী নহে। প্রকৃতি আপন উদ্দেন্ট দিদ্ধ করিবার জন্য অজ্ঞান মনুষ্যকে গ্রবঞ্চন। করিতেছে--কিন্ত জ্ঞানী তাহাতে ভূলেন ন!। তিনি নির্বাণ- শান্তির আশ্রয় লইবার জন্য এই ক্ষণস্থায়ী বিষয়-বিভ্রম হইতে দুরে পলায়ন করেন। তাহার অন্তরে তিনি এক মহাশূন্য স্থাপন করিয়াছেন--কিছুতেই তাহাকে আর বিচলিত করিতে পারে ন1। তাহার ওঠাধরে যদি কখন চাঞ্চল্যের রেখা দেখা যায়, মে কেবল বিশ্বজনীন ওদার্্য ও মানব-দুঃরখের জন্য অনুকল্পা'জনিত মধুর প্রশান্ত হাদ্যের ঈষৎ বিশ্কুরণ মাত্র।”
সাতে ভিত
রাহ্মণ্যশাস্ত্রের মাঁয়াবাদ ও অদ্বৈতবাঁদ। হই (৪) ্রাহ্মণ্যশান্ধের মায়াবাদ ও অদৈতবাদ।
ফরালী লেখক আন্দ্রে শেভ্রিয়ে? ভারতের মায়াবাদ সম্বন্ধে যাহা লিখিয়াছেন, তাহ! সর্ধাংশে আমাদের মতের সহিত এঁক্য না! হউক্, তাহার মূলে যে অনেকটা সত্য আছে এ কথ অস্বীকার করা যাক না। বৈদিক ষুগ হইতে মায্াবাদের সূত্রপাত হইয়া কি. করিয়া ক্রমশঃ বিস্তার লাভ করিয়াছে এবং তাহার বিষম ফল আমাদের সমাজের হাড়ে ছাড়ে প্রবেশ করিয়াছে তাহা তিনি বিশদরূপে দেখাইয়। দিয়ীছেন। একজন বৈদেশিক কিছুকালের জন্য এদেশে ভ্রমণ করিতে আপিয়া আমাদের শাস্ত্রের ম্খব ষে যথার্থরূপে গ্রহণ করিতে পারিবেন ইহা! প্রত্যাশী কর! যায় না। তবু কতকটা থে তিনি পারিয়াছেন, ইহাই আশ্চর্য্য । তিনি ছুই একটা কঠোর কথ! বলিয়াছেন; তাহ! আমাদের শোন। ভাল। তাহাতে উপকার ভিন্ন অপকার নাই। অনেক সময় আমাদের নিজের দোষ ৩৭ নিজে বুঝিতে পারি না) তাহ! বাহিরের লোকের চোখে পড়ে। যাহ! হউক, তিনি যাহ! বলিয়াছেন তাহাতে একটু নৃতনত্ব আছে। তিনি বলেন, “এই অদ্বৈতবাদ যাহা ভারতবর্ষে ছুই হাঁজার বৎসর হইতে চলিয়া আমিতেছে, ইহা! কোন ব্যক্তিবিশেষের বা সম্প্রদায়- বিশেষের মত নহে। সমস্ত হিন্দুজাতি সাধারণতঃ জগৎকে যে ভাবে দর্শন করে, তাহাই দার্শনিক ভাষায় বর্ণিত হইয়াছে মাত্র। ইহা ভাল করিয়। বদি বুঝিতে চাও আর কোন জাতির আত্যস্তরিক ভাব আলোচন! কবিয়৷ দেখ? ত্রাঙ্গণদিগের পুরাতন দার্শনিক কবিতা সকল পাশাপাশি রাখিয়া, বাইব্ল্ গ্রস্থখানি একবার পাঠ করিয়া দেখ। ভাহাঁতে কি দেখিতে পাও? আর কিছুই নহে,
হ৮ ভারতবর্ষে ।
কতকগুলি গীতিকবিতা৷ মাত্র; রোষ, দ্বেষ, নিরাশী, উৎসাহ, উচ্ছাস, মনের প্রচণ্ড ভাবদমৃহ, আত্মার সমস্ত কম্পন ও আন্দো, লন, রূঢ় উপমার দ্বারা ও জলন্ত কল্পনা-সহকারে ব্যক্ত হইয়াছে মাত্র; তাহার লিখনধারাও বিচ্ছিন্ন ও আকক্সিক এবং ভাষাও অতি সরল ও অন্ুট ; সে ভাষায় দার্শনিক চিন্তার তরঙ্গলহরী অনুসরণ কর! স্বকঠিন--তাহাতে কেবল অস্ফুট কণ্ঠে মানব-আত্মার আবেগ প্রকাশ করা যায় মাত্র। মনের আবেগ স্থায়ী ও প্রচণ্ড হইলে তাহার ফল কি হয় ?--না, মানুষ আপনার উপর ফিরিয়া আইসে। যখন সে যন্ত্রণ। ভোগ করে, যখন সে কাহারো! প্রতি দ্েষ প্রকাশ করে, তখন সে আপনাকে অতিক্রম করিতে পারে না। যে বহি- অর্গতের সহিত তাহার সংঘর্ষণ উপস্থিত হয়, সে বহির্জগৎকে মে পৃথক্ ভাবে দর্শন করে। যে আত্মা আবেগপুর্ণ তাহাতে আমিত্ব দৃচরূপে সংলগ্ন থাকে ও পৃথকভাবে অবস্থান করে) এই অবস্থাতে সে ধখন জগতের মুল তলাইয়। দেখিবার চেষ্টা! করে, তখন সে সেই মূলকে স্বতন্ত্র ও সর্বশক্তিমান আত্মা বলিয়াই করপন! করে।
“কিন্তু ব্রাঙ্মণদিগের মনের গতি ভিন্নকূপ হুওয়ায় তাহাতে তিন্নরূপ ফল উৎপন্ন হইয়াছে। বেদে কি দেখিতে পাওয়৷ যায়? তাহাতে কেবল প্ররৃতিবর্ণনামূলক কবিতা,--অরুণ, বরুণ, ইন, অগ্নি, আকাশ, বাষু, পৃথিবী ইহাদেরই স্বতিগান। উহা! বহিু'্থী, অন্তমু্থী নহে। উহাতে ব্যক্তিগত হৃদয়ের ভাব কিছুই নাই। উহাতে আত্ম! স্বতন্ত্র বলিয়া উপলব্ধি হয় না, কেবল প্রকৃতির প্রতিবিষ্ব--পরিবর্তনশীল ছায়ামাত্র বলিয়া মনে হয়। প্রকৃতিতে যেমন-যেমন পরিবর্তন উপস্থিত হইতেছে, আত্মাও উপস্থিতমত তাহারই ক্ষণস্থায়ী আকার ধারণ করিতেছে। কখনও মেঘরূপে নীল আকাশে ভাসমান, কখনও হূর্যবূপে দিগন্তে সমুদিত। এই
ত্রাঙ্মণ্যশান্ত্রের মায়াবাঁদ ও অদ্বৈতবাঁদ । ২৪
আত্মাতে কোন আবেগ স্থায়ীরূপে থাকিতে চায় না, অন্তরে ঘনী- ভূত হইতে পারে না, পরিপুষ্ট হইতে পারে না; তাহার উপর দিয়া দ্রুততাঁবে চলিয়] যায় মাত্র। আত্মা আপনাকে বাহিরে প্রক্ষিপ্ত করে; আপনার চঞ্চল ক্ষণস্থায়ী ভাবসমূহ বহির্জগতে আরোপ করে। যদি আনন্দ হইল, তবে সে আনন্দ অগ্রির--ধিনি দ্রাক্গা- লতার মধ্যে দীপ্তি পাইতেছেন ) ষদি লঙ্জা ভয়ের উদ্রেক হইল, তবে সে লজ্জা ভয় তরুণ উষার) লঙ্জারক্কিম-কপোল বালিকার টায় উষা যেন মেঘের অন্তরালে লুকাইতেছে। অর্থাৎ একটি অখণ্ড পদার্থের মধ্যে কেন্দ্রীভূত না হইয়া, যে "আমি, ইচ্ছ! করিতেছে, কাজ করিতেছে, সুখ ছুঃখ ভোগ করিতেছে সেই আমির মধ্যে ব্ধ না থাকিয়া বৈদিক কবি আপনাকে বিশ্বময় ছড়াইয়াছেন। তিনি সমস্ত পদার্থে পরিব্যাপ্ত; প্রকৃতির আকার, প্রকৃতির শব্ধ, প্রকৃতির বর্ণ এই সমস্তের স্থান তাহার আত্ম! অধি- কার করিতেছে এবং প্রকৃতিও তাহার চিন্তায়, তাহার কল্পনায়, সজীব হইয়! উঠিতেছে।
“বৈদিক কবি প্রকৃতির জীবন্ত ও দেবোপম শক্তিগুলির পুজা করেন বটে, কিন্তু তাহার এই অদ্বৈতধন্ম একটু বিশেষ ধরণের । ইন্জ, বরুণ, অগ্নি, কূর্ধ্য এই সকল দেবাত্মা। বটে, কিন্ত ইহাদের ব্যক্তিগত শ্বাতন্ত্রা তেমন সুম্পষ্ট নহে--ইহা্দের পরস্পরের মধ্যে আকার-বিনিময় ও পরিবর্তন চলিতেছে । এই উতাই হুর্্য, এই নুর্য্যই অগ্নি, এই অগ্নিই বিদ্যুৎ, এই বিছ্যুতৎই ঝটিকা এবং এই ঝটিকাই বৃষ্টি; সকলই পরম্পরের মধ্যে যুক্ত, মিশ্রিত এবং ওত- : প্রোত। ইহার মধ্যে কিছুই স্থায়ী নহে। মন্থুয্যের মধ্যেও স্থায়ী ব্যক্তিত্বের তাব নাই--বাহ্জগতেও কেবলি পরিবর্তন। এই ভাবটি বেদেতে যাহ] বীজরূপে অবস্থিত, তাহা ব্রাঙ্গণদিগের
৩৪ ভার তবর্ষে।
পুরাতন দীর্শনিক কাব্যসমূহে বদ্ধিত ও পরিপুষ্ট হইয়া ক্রমশ: বৃক্ষরূপে পরিণত হইয়াছে । এই সকল গ্রন্থ পাঁঠ করিলে দেখা যায়, যে আমিত্বের ভাব যুরোপীয়দিগের চিন্তা ও ধারণার মধ্যে বদ্ধমূল, সেই আমিত্ব উহাতে নাই । মনের এই অবস্থা ভাল করিয়। বুঝিতে হইলে, আমাদের জীবনের কোন বিশেষ মুহূর্তকে স্মরণ করিয়। দেখিতে হয়। কখন কখন আমাদের জীবনে একপ্রকার স্বপ্রবৎ অবস্থা হয়, তখন যেন আমাদের আমিত্বটা শিথিল হইয়া আসে, তথন আপনার নাম উচ্চারণ করিলেও ফেন কোন ব্যক্তির ভাব মনে আইনে না, যেন অর্থহীন শব্দমাত্র বলিয়া উপলব্ষি হয়; তখন কষ্টের সহিত আমরা প্রশ্ন করি, “আমি কি আছি? এই “আমির অর্থ কি? এই অদ্ভুত অনুভব যাহা আমাদের মধ্যে ক্ষণিক তাহা হিন্দুদিগের অন্তরে স্থায়ীভাবে অবস্থিত। তাহার! আত্মাকে এইভাবে দেখে, যেন উহা৷ একটি ক্ষেত্র__যাহার উপর দিয়? বিবিধ স্বপ্ন ক্রমাগত গতিবিধি করিতেছে) অন্তরের মধ্যে এমন কিছুই দেখিতে পায় ন যাহা স্থায়ী। ণচলৎ চিত্তং চলত বিভ্তং চলৎ জীবন- বৌবনং।” এই বিশ্বের অনিত্যবাদ হিন্দুদিগের মধ্যে শান্ত্রাকারে পরিণত হুইয়াছে। আমাদের দেহ অন্ন হইতে অর্থাৎ পৃথিবী হইতে উৎপন্ন; বহির্জগত হইতে পঞ্চভূত আহরণ করিয়া! আনি- তেছে, আবার উহা ত্যাগ করিতেছে, আবার নৃতন উপকরণ গ্রহণ করিতেছে ; এই প্রকারে দেহ বদ্ধিত হইয়া জীবিত রহিয়াছে ; আমাদের জীবন কতকগুলি পরিবর্তন ভিন্ন আর কিছুই নহে। ক্ষিতি, তেজ, মরুৎ, ব্যোম, পশুপক্ষী, বৃক্ষ, উদ্ভিজ্জ, চিন্তা, মন, চতুর্ষেদ সকলই এই বিশ্বব্যাপী চঞ্চল ক্ষণস্থারী আবর্তের অস্তভূতি। সুরধ্য সমুদ্র জীবজন্ত উত্ভিজ্জ হইতে যে বাপ্পরাশি নিঃশ্বদিত হইতেছে এবং যাহা সুরধ্য,, জীবন্ত ও উত্ভিচ্জ-দেহের অংশীভূত
বাঙ্গণ্যশাস্ত্রের মাঁয়াবাঁদ ও মন্বৈতবাঁদ। ৩
হইয়া ছিল, সেই বাপ্পরাশি উথিত হইয়া সম্মিলিত হইতেছে, দীপ্তি পাইতেছে, আকাশময় ধাবিত হইতেছে, শীতল হইয়! পুনর্ধার ধরাতলে পতিত হইতেছে, আবার অবস্থাবিশেষে, সৃর্যা, সমুদ্র, জীবজ্ত, বৃক্ষলতার আকার ধারণ করিতেছে । এই প্রকারে ঘাহ] আমর! স্বতন্ত্র পদার্থ বলিয়া! বিশ্বাস করি, তাহা অনবরত পরস্পরের মধ্যে মিশ্রিত হইতেছে, এবং পরস্পর হইতে বিধুক্ত হইতেছে । যজ্ঞের হোতা ধিনি, তিনি বাযু হইয়া ধূম হইয়া যাইতেছেন। ধূম হইয়া গিয়া বাম্প হইয়া যাউতেছেন ; বাষ্প হইয়া গিয়া! মেঘ হইয়া যাইতেছেন, এবং মেঘ হইয়া অবশেষে বুষ্টরূপে পতিত হইতেছেন, পরে আবার প্রাণরূপে শশ্তাকারে, উত্ভিজ্জাকারে, বুক্ষাকারে, সর্ধপাকারে পরিণত হইতেছে ন।
“উপরে ঘেরূপ বর্ণিত হইল, তাহার সহিত অ্বৈতবাদের অতি অল্পই 'প্রতেদর ; এবং দুইটি পথ দিয়া এই অদ্বৈতবাদে উপনীত হওয়! যায়। যেহেতু, সর্ধপ্রকার আকৃতি একবার যাইতেছে আবার আসিতেছে, সুতরাং উহার মায়াময়; উহাদের গুণ, উৎপত্তির পদ্ধতি, উহাদিগের হইতে প্রত্যাহরণ করিয়া! লও, তাহা হইলে অবশিষ্ট কি থাকে? কিছুই থাঁকে না, বৌদ্ধেরা বলে নাস্তি অবশিষ্ট থাকে; জগতের কোন অস্তিত্ব নাই-নাস্তিত্ব ভিন্ন আর কিছুই নাই। ব্রাহ্মণের বলেন, যাহা আছে তাহাই আছে_-তৎসৎ_- তাহা ভিন্ন আর কিছুই নাই। সেই তৎসৎ সর্বগুণ-বিরহিত। যাহ! «“নেতি নেতি,৮ যাহা কারণ৪ নহে, কার্ধাও নহে, এক কথায় তাহাই ব্রহ্ম ; এই ত্রহ্গ ক্রীবলিঙ্গ শব্ববাচক, অনির্দেশা ও বিকার- শৃন্য । ইনি চিন্যা করেন না, ইচ্ছা করেন না, দর্শন করেন না, জানেন না, ইনি শুদ্ধ ও নিগুণস্থরূপ। বিশুদ্ধ চিন্তার দ্বারা এই ঙ্ধকে প্রাপ্ত হওয়া বায়, £ই ক্লীবলিগ্ ব্রন্মের উপরিভাগে পুংলিঙ্গ
২ ভারতবর্ষে 1
বর্গ অবস্থিত । এই ব্রহ্ম জীব্ত, ম্পৃশ্য ও সবর্ণ। ইহার অর্থ এই £-. এই চঞ্চল ক্ষণস্থায়ী আবর্তের অন্তস্তলে যেরূপ একমাত্র স্থায়ী পদার্থ প্রচ্ছন্ন আছে, সেইরূপ এই আবর্ত সংগঠন ও সংরক্ষণের জন্যও একটি শক্তি থাক চাই। ঘেছেতু জগতে কেবলি গতি, সুতরাং এমন একটি শক্তি থাকা! চাই যে এই গতিকে নিয়মিত করিতে পারে। বেহেতু, এই জগৎ প্রস্তরের ন্যায় অচল নহে, পরস্থ বৃক্ষের ন্যায় প্রাণবিশিষ্ট, সুতরাং ইহা সংরক্ষণ ও পরিপোষণের জন্য একটি আত্মার আবশ্যক । এই আত্মাই ব্রহ্ম, ইনি বিশ্বের বীজস্বরূপ, ইনি 'জীবস্ত অশরীরী আত্মা” । ইনি জীবন্ত, সুতরাং সগুণ, ইনি নিগুণ বঙ্গের প্রথম-আবির্ভাব--প্রথম বিকাশমাত্র । নিগুণ ব্রন্ধ ও সগ্তণ ব্রহ্ম এক নহে। ব্রক্ষা! ব্রহ্ম বটে, কিন্তু মায়ার দ্বার! আচ্ছন্ন, কালের অধীন। ব্রঙ্গের দুই রূপ; এক, ধিনি কালকে জানেন ) আর এক, বিনি কালকে জানেন না। ধিনি কালকে জানেন তাহার অংশ আছে। এক মহান্ জীবস্ত আত্মার অভ্যন্তরে কালই নকল জীবকে বদ্ধিত করিতেছে ও বিনষ্ট করিতেছে, কিন্তু ধিনি জানেন, শ্বয়ং কাল কাহার মধ্যে বিলীন হইয়1 যায়, তিনিই বেদজ |”
“কল্পনা কর! যাউক, এক পূর্ণ সত্তা, বিশুদ্ধও নিগুপ সকলের আদিতে ও নকলের মূলে বর্তমান) তিনি সকল আকার ও সকল বীজের আধার” বাহিরে আপনাকে প্রকাশ করিয়া, তিনি মায়ার অধীন হইয়াছেন; “নিজ দেহের উপকরণ হুইতে উর্ণবায় যেরূপ তন্ত আহরণ করিয়া আপনাকে আচ্ছাদন করে, সেইরূপ তিনি নিজন্বরূপনিঃস্যত গুণের দ্বারা আপনি আচ্ছন্ন হইয়! আছেন, ; তাহার প্রথম নিসর্গ সণ্ডণ জীবন্ত ব্রহ্ম, সেই কুক্ষ সার্ব- তৌমিক আত্মা “ধিনি জগতের মধ্যে থাকিয়া, জগতের বিচিত্রতা
্াঙ্গণ্যশাঙ্্রের মায়াবাঁদ ও জদ্বৈতবাঁদ | শও
মম্পাদন করিতেত্ছন, সেই আম্মা পুরুষও নহে, স্বীও নহে এবং ক্লীনও নহে ( সেই আত্ম। যিনি কোটি কোটি আকার ধারণ করিতেছেন, ধাঁহা হইতে সকল পদার্থ নিঃস্থত হইন্ত্রা আবার তাহাতেই গন করে, বিনি নিজে বিশ্বব্ঙ্গাণ্ডের ন্যায় অস্থাম্বী, ধিনি কোটি কোট ঘুগের পর-_যাহ। তাহার এক দিন--অচ্ছায়, অদেছ, অবর্ণ” নিগুণ পররদ্ধে পৃনর্বার লয় প্রাপ্ত হন। এই জগৎ এক প্রকাণ্ড বৃক্ষের ন্যায় শাখাপলপৰ বিস্তার করিয়া! আছে) ইহার মূলে বে বী্গ ছিল, ভাহাই সমস্ত বৃক্ষে সঞ্চালিত হইয়া, তমসাবুত মুল হইতে স্থুকোমল পুষ্প পর্যন্ত নর্ববাংশে প্রাণ সঞ্চার করিতেছে । বৃক্ষেবু স্বকৃ, পুষ্প, পল্লব, কোধাণু, সমস্ত পরিবর্তিত হইতেছে, মরিয়া যাইতেছে, আবার নূতন হইয়া জন্মিতেছে। যে মূল*শক্তি বৃক্ষকে উৎপাদন করিয়াছিল, যাহা! বৃক্ষবিশেষের জন্মমৃতার মধ্যে সর্বদাই বর্তমান, সেই শক্তিই ক্ষণস্থারী ভৌতিক উপকরণ-সকলকে বিশেষ বিশেষ আকার ও শৃঙ্খল প্রদান করিতেছে । জগতের প্রাণ, জীবন্ত ব্রন্মর্ূপ যে এই শক্তি, ইহ কোথা হইতে নিঃস্কত হইতেছে ?- ভূমি হইতে । ভূমিই আদিম বন্ধের প্রতিরূপ। তাহা হইতে সমস্ত উৎপন্ন হইতেছে, তাছা- তেই সমস্ত প্রতিগমন করিতেছে) ঘুগঘুগান্তের পর বখন এই শক্তি -যাহা বৃক্ষকে পোষণ করিতেছিল_-ক্ষর হইবে, তখনই পর্রিবর্তনের শেষ হুইবে, বৃদ্ধির অবসান হুইবে, বৃক্ষ পৃথিবীতে প্রতিগমন করিবে এবং নমস্তই নিশ্চেষ্টতার মধ্য মগ্ন হুইবে। “আপাততঃ, তুমি স্ত্রী, তুমি পুরুষ, তুমি শিশু, তুমি যুবতী, তুমি যষ্টি ধারী বুদ্ধ। দুমি নীল ভ্রমর, তুমি হুরিৎপক্ষ ও লোহিত* নেত্র শুকপক্ষী, তূমি বজ, তুমি ফড়ধতু, তুমি সমুদ্র। তুণি অনাদি, কেন না, তুটি অনন্ত, তেসা হইতে বিশ্বত্রন্ধাণ্ ৫
৩৫ ভাঁরতব্ষে।
উৎপন্ন হইয়াছে। কিন্তু যেমন এই প্রবহমান নদীদকল সপুগ্রে গিয়া বিলীন হইয়া যাপন, তাহাদের নাম ও আকার বিলুপ্ত হইয়া যায়, সেইরূপ, শৃত্য, চন্দ্র, ক্ষত্রিয়, ত্রাঙ্মণ, মক্ষিক, ভ্রমর, পক্ষী, দেবগণ, বিষণ, শিব এবং স্বয়ং কাল-যাহাতে দ্বিতীয় ব্রহ্ম বাস করেন--এই সমস্ত সেই অচিন্ত পুরুষে বিলীন হুইয়। যাইবে, তাহাদের নাম ও আকার কিছুই থাকিবে নাঃ । এখনও দৃশ্যমান জগতে যাহ! দেখা যাঁয় তাহা কিছুই বাস্তব নহে, তাহ ' আবি- ভাবমাত্র। ব্রক্ধ কাল-দর্পণে, মায়াদর্পণে আপনাকে বহুধা ও বিচিত্র ভাবে দেখিতেছেন ; কিন্তু বস্ততঃ, যাহা আছে তাহাই আছে, তৎসৎ ভিন্ন আর কিছুই নাই।
"এই অদ্বৈতবাঁদ, কল্পনার খেল! মাত্র নহে, সম্প্রদায়-বিশেষের মত মাত্র নহে, পরস্ত ইহা একটি গভীর বিশ্বাস যাহ! ব্যবহারে পরিণত হইয়াছে, যাহ! বিজন চিন্তার ও একাগ্র ধ্যানের স্থপরিণত ফল। একমাত্র আপনাতে বদ্ধ হইয়া, ম্বপ্নমধ্যে মগ্ন থাকিয়া, ব্রাহ্মণ বাস্তব ও স্বপ্নের মধ্যে আর প্রভেদ দেখিতে পান ন1, জগৎকে বাম্পবৎ মনে করেন। জগতের সহিত তাহার যে বন্ধন ছিল, সে বন্ধন আর অনুভব করেন না| যাহাকে তিনি অবাস্তব বলিয়! জানিতেছেন তাহাকে কি করিয়া ভালবাসিবেন ? যাহ! আমাদের হাতের মধা দিয়া! গলিয়া যাইতেছে, তাহাকে কেমন করিয়। ধরিয়া রাখিবেন?
“হে মুনিপুঙ্গব! এই জঘন্য ক্ষণভগ্গুর, রক্ত-মাংস'অস্র"মুত্র- পুরীষময় দেহ ধারণ করিয়া কিরূপে স্ুথের আশা করিব? লোভ ছ্বেষ, মোহ মাতসর্য্য, অসুয়া, বিচ্ছদ, ভয়, দুঃখ, ক্ষুধা-তৃষা, জরামৃত্যু, রোগশোকদ্বারা যে দেহ আক্রান্ত সে দেহ লইয় কিরূপে সখের আশ! করিব? আমরা দেখিতেছি মকলই নশ্বর ।
বাঙ্গণাশীস্ত্রের মায়াবাদ ও অদ্বৈতবাদ। ৩৫
যাহার আর নাই তাহাদের দিকে ফিরিয়া দেখ, যাহারা এখনও হয় নাই তাহাদের দিকে একবার চাহিয় দেখ। শদ্যের ন্যায় মনুষ্য পরিপক হইতেছে, শঙ্যের স্টায় তূলুষ্ঠিত হইতেছে, আবার মৃত্তিক1 তেদ করিয়া! উত্থান কৰিতেছে”..****হৃদয় হইতে বাঁসন! নির্মল করিয়া বনে গমন করিয়। বৃহদ্রথ এইরূপ বিশ্বাস করিয়া ছিলেন। উদ্ধবাহু হইয়া, সুর্য্যের দিকে নেত্র স্থির রাখিয়া তিনি সহস্র বংসর বিজন অরণ্যে শান্ত সমাহিত হইয়া বাস করিয়া ছিলেন। কারণ, শীন্তচিত্ততা, নিশ্চেষ্টতাই মকল হিন্দুশান্ত্রে ব্যবহারিক সিদ্ধান্ত। সকলই মায়াময় এই সিদ্ধান্তে যদি একবার উপনীত হওয়া! যায়, তবে দেই মায়াজাল হইতে আপনাকে মুক্ত করিবার চেষ্টাও স্বাভাবিক হইয়। পড়ে । যদি এই মায়াময় জগ- তের ক্ষণস্থায়ী বাঁসনা, অন্গুভব, ইচ্ছা প্রস্ৃতিকে নির্মূল করা যায় তবেই মুক্তিলাত হইতে পারে, নচেৎ মুক্িলাভের আশ! নাই। এইরূপ কল্পনা-জড়িত চিন্তাপ্রভাবে হিন্দুর অন্তপ্ধ একেবারে শূন্য হইয়া পড়িল; কাজ করিবার আর কোন উদ্দেশ্য রহিল না-_ যখন নিজেরই অস্তিত্ব নাই, তখন কাজ করিয়া কি ফল? স্থুতরাং আসন-বদ্ধ হইয়। হিন্দু ধ্যানে মগ্ন হইল, স্বপ্ন দেখিতে লাগিল। কাহার স্বপ্ন? কাহার ধ্যান ?-্রঞ্ষের ধ্যান। ত্রঙ্ষের ধ্যানই মুক্তি। আমিই ব্রন্ধ -ত্র্ধ মায়ায় বদ্ধ হইয়াই আপনাকে বহুধা করিয়া দেখেন__এই মায়া-দর্পন হইতে বিমুখ হইলেই, ্রক্ষ স্ব- স্বরূপে ফিরিয়া আইদেন, তখন ব্রহ্গের সহিত আমিও যুক্ত হই। অতএব “সো২হং ব্রহ্ম” এই মন্ত্র উচ্চারণ কর। “কারণ, ধিনি আপনাকে ব্রহ্ম বলিয়া জানেন, তিনি ব্রন্ষের সহিত এক হইয়! ষানঃ। এম আমরা, এই কুজ্ঝটিকা-সমাচ্ছন্ন আবির্ভীবসমূহের মধ্য হইতে, সেই “ততৎসৎ/কে জানিতে চেষ্টা করি, তাহা হইলে
৩৬ ভারতবর্ষে।
তৎক্ষণাৎ আমাদের দীমাবদ্ধ জীবনের সকল প্রতিবন্ধক দূর হইবে, আমরা পুনর্ধার অনাদি অনস্তত্বরূপে গরিণত হইব-_. যেধান হইতে আমর। আপিয়ছিলাম, নেইখানেই আবার ফিরিয়া যাহব। এবড় অদ্ভূত ব্যাপার, কুত্রাপি এ কথ শুনা যায় ন। যে, কর্মে মুক্তি নাই, বিথ্বানে মুক্তি নাই, ভাবে মুক্তি নাই, ক্রিয়াকলাপে মুক্ত নাই, পরন্ত জ্ঞানেই মুক্তি। “বাহাদিগের চরিত্র বিশুদ্ধ, যাহারা বেদ পাঠ করে, বজ্ঞান্ুষ্টান করে, মৃত্যুর পরে তাহার! দেব-লোক গমন করে, কিন্ত তাহাদিগের সাঁঞ্চত পুণ্য শেষ হইয়া আপিলে, তাহারা আবার ইহলোকে ফিরিয়। আইসে, কারণ, তাহারা সত্যকে জানে না। তাহারা নৃতন আকারে জন্মগ্রহণ করে, আবার কামন৷ করে, ইচ্ছা করে, কর্ম করে, অনুভব করে, জীবন ধারণ করে। *** ১০ যে ব্যক্তি ব্রহ্ম ও জগতের মধ্যে প্রভেদ দেখে, সে পরিবর্তন হইতে পরিবর্তনে, মৃত্যু হইতে মৃত্যুতে উপনীত হয়?” অর্থাৎ তাহাদিগের পুনঃ পুনঃ জন্ম হয়। চিরশান্তি লাভ করিতে চাও ত নিঃশ্বীসকে রুদ্ধ কর, চিত্তকে একাগ্র কর, ইন্ত্রিয়গণকে নিগ্রহ কর--বাকাকে স্তম্ভিত কর। তাণুদেশে জিহ্বাগ্র চাপিয়া রাখ, ধীরে ধীরে শ্বাস ত্যাগ কর, আকাশে কোন বিন্দুর উপর লক্ষ্য স্থির কর; তাহ। হইলে চিন্তা রহিত হইবে, চেতনা বিলুপ্ত হইবে, আমিত্ব ঘুচিয়। ষাইবে। “সুথছুঃখ আর অনুভব হুইবে না, পর প্রশান্তি ও কৈবল্যে উপনীত হইবে। আত্মা যখন পরমাস্মাকে চিনিতে পারিবে তখন আর তাহার আকাশ থাকিবে না, কাল থাকিবে না, সংখ্যা থাকিবে না, সীমা থাকিবে না, গুণ থাকিবে না। 'লুতাতন্ত বেরূপ আপনার তন্ত অবলম্বন করিয়৷ যুক্ত আকাশে উত্থিত হয়, সেইবপ যেবাক্তি কার অবপন্থন করিয়। ধ্যান করে সে মুক্তিলাও
বান্ধণ্যশাস্ত্রের মায়াবাদ ও অছৈতবাদ । ৩৭
করে।, “থিনি মনহীন, অথচ মনের অভ্যন্তরে অবস্থিত, যিনি গ্রচ্ছন্ন অথচ সকলের মূলে বিরাজমান, তীহ্াতে চিত্ত নিমগ্র কর, আত্মার সকল গ্রন্থি ছিন্ন হইয়া যাইবে । মন ও ইচ্ছ। ধ্বংদ হই- লেই মায়ার সমন্ত ইন্তরজাল তিরোহিত হয়। “তখন আমরা ধূম-হীন অগ্নির ন্যায় প্রতীয়মান হইব, রথকে পরিত্যাগ করিয়। আরোহী যেরূপ রথের চত্রতূর্ণন নিরীক্ষণ করে, আমরা তখন সেইরূপ হইব'__ “ছুঃখ আমাদের অন্তরে আর থাকিতে চাহিবে না; যেব্যক্কি ব্রহ্মকে জানে, সে চিরশান্তি প্রাপ্ত হয়” যখন আমরা জানিলাম, আমরা সেই পূর্ণ জ্যোতিঃম্বরূপের স্,লিঙ্গ, তখন আর কে আমাদিগ-ক দুঃথদ্দিতে পারে? তখন আর এ কথা বলি না, “এই শরীরই আমি, কিম্বা আমি অমুক, কিন্তু বলি, “আমিই ব্রহ্ম, আমিই জগৎ। তখন আর আমরা 'গুণ-তরঞ্গে” নারমান বা বিচলিত হই না| ******
“অতি হুক্ম আলোচনার প্র্াবে ব্রাহ্মণের মস্তি দার্শনিক ঘুর্ণিরোগে আক্রান্ত; চিন্তার দ্বার চিন্তার উচ্ছেদ--ইচ্ছার ধ্বংস সাধন, ইহ ত ব্রান্ধণা দশনের প্রত্যক্ষ ফল। এই মায়াবাদের- প্রবণতা সেই আদিম বৈদিক যুগে আরম্ভ হইয়া তাহার কল এতদূর পর্যন্ত গড়াইয়াছে। এই পরিণাম অধশ্যস্তাবী । অন্যত্রও ইহার দৃষ্টান্ত দেখা যায়। একটি সমস্ত জাতি মায়াবাদে দীক্ষিত-_-ভারতবর্ষ ছাড়া আর কোথাও এরূপ দেখ যায় ন1 বটে, কিন্তু যুরোপেও এব্ধপ ব্ক্তিবিশেষ মধ্যে মধ্যে দেখিতে পাওয়া যায় ষাহারা হিন্দু-ভাবে অন্ুপ্রাণিত। ফান্সে, আমাদের একজন বড় কবি, জা লাহর, তিনি অজ্ঞাতনারে |হন্দু; তাহার “মায়” ও “নাস্তি' বিষয়ক গ্রস্থে হিন্দু- শাস্ত্রের তাব জীবন্ত ভাবে লক্ষিত হয়। ইংলও, যেখানকার লোকের! এমন সাহসী, এমন উদ্যমশীল, যেখানে আমিত্ব-ভাব এমন স্থায়ী ও বলবৎ যেখানকার ধর্ম হিক্রধরণের একেশ্রবাদ, দেখানেও
৩৮ ভারতবর্ষে ।
হিন্দুপ্রাণ “শেশি” উদিত হইয়াছেন। সমাঁলোচকের] স্প্ইই দেখা- ইয়াছেন, শেলির অনেকটা বৈদিক ধরণের কল্পন1 ছিল। *** *** তিনিও বৈদিক কবির ন্যায়, আপনাকে বহির্জগতে প্রক্ষিপ্ত করিয়া- ছেন; তীহার কবিতা,__মচল প্রকৃতির সচল প্রতিবিম্ব; যাহাতে ব্যক্তিত্বের অধিষ্ঠান উপলব্ধি হয় একপ হ্বদয়-ভাঁব শেলির কবিতাতে বিরল; “আমি” বলিয়া! যে একটা অনুভূতি তাহা তাহার কবিতাতে অঠি অন্মাত্রায় লক্ষিত হয়। সকল সময়েই, তাহার হৃদয়ের উচ্ছাাস,__বহিঃপ্রক্ৃতির দরের উচ্ছাঁস। তাহার আত্মা প্রন্কৃতি হইতে স্বতন্ব নহে, পরন্ত প্রকৃতিতে ছড়াইয়।৷ আছে। স্থৃতরাং প্রকৃতির নকল পদার্থ ই তাহার নিকট প্রাণবিশিষ্ট, জীবস্ত, বোধ- বান, গতিশীল ও বিচিত্র-ূপধারী। জগতের মূলে তিনি এমন এক আম্মা দেখিতে পান, আমর! যাহার চিন্তাস্বরূপ; যে আত কীটের মধ্যে স্পন্দিত হইতেছে, ও তারকার মধ্যে দীপ্তি পাইতেছে ; এমন একটি আত্মা--প্রকৃতি যাহার রহস্যময় পরিচ্ছদ; যাহ] সমস্ত দৃশ্যমান পদার্থের মধ্যে প্রচ্ছন্নভাবে বর্তমান, এবং যাহাকে কখন কখন, কোনও বির মুহূর্তে, স্বচ্ছ আবরণ-মধ্যবর্তী স্রান দীপশিখার স্যার সুন্দর আকৃতির ভিতর দিয়া আমর! দেখিতে পাই। "শৃঙ্খলা মুক্ত প্রমথ” নামক তাহার কবিতাটি পাঠ করিয়া দেখ_ যেখানে সমস্ত আত্মা, সমস্ত জীব, একতানে সন্মিলিত হইয়াছে, বিশেষতঃ যে- খানে পৃথিবীর সহিত চন্দ্রের কথাবার্তা চলিতেছে--সেই অংশটি পাঠ করিয়া, যে প্রাণ সকল পদার্থের মধ্য দিয়া প্রবাহিত-_সেই বিশ্ব-প্রাণের অনন্ত উচ্ছবাদে কে না উন্মন্ত হইস্স! উঠিবে? বিচিত্র শব, বিচিত্র গন্ধ, বিচিত্র বর্ণ বাহ! আমরা বাহিরে দেখি--সমস্তই ব্রহ্গের মায়া; এই মায়ামোহে কে না মাচ্ছন্ন হইয়! পড়িবে? কিন্তু'শেলি ইহার অধিক যান নাই? শান্ত, নিগুণ বদ্ষকে তিনি দেখিতে পান নাই।
'আাহ্গম্যশান্ত্ের মায়াবাদ ও অনৈতধাদ। ৩৯
ছিন্দ-বুদ্ধি ও হিন্দু কল্পনা--এই ছুই ধাপের মধ্যে একটি ধাঁপে তিনি পৌছিয়াছেন মাত্র। সেটি কল্পনার ধাপ। তিনি বৈদিক কবির গ্বপ্োচ্ছাাস, আনন্দোচ্ছাস পরাস্ত পৌছিয়াছেন ? কিন্তু হিন্দু দার্শ- নিকের লয়তত্বে পৌছেন নাই । তাহার অদ্বৈতবাদে বিশ্ব-প্রাণের উচ্ছাস আছে, নির্ববাণ নাই। তাহার অট্্বতবাদ সুস্থ ও সবল। «আমিয়েল আঁর একটি অপেক্ষাকৃত পর্ণাবন্নব দৃষ্টান্ত । ইনি সগুণ জীবস্ত ব্রহ্মকে ভেদ করিয়া আরও একটু ভিতরে তলাইয়া- ছেন। ইনি ত্রদ্ষের শান্তস্বরূপে গ্রবেশ করিয়। নিস্পন্দ অসাড় হইয়া পড়িয়াছেন; মুক্ত হইয়াছেন। *** **. হিন্দুর নিশ্চেষ্টতা, হিন্দুর বৈরাগ্য, হিন্দুর মায়াবাঁদ, ইচ্ছা! ভাঁব ও বুদ্ধির এই যে তিন ধাপ, ইনি এই তিন ধাপই মাড়াইয়৷ আসিয়াছেন। ইনি আপনাকে ্রাহ্মণদিগের ভ্রাতা বলিয়! স্বীকার করেন। “ভারতবর্ষীয় যোগীর হ্যায় আমার আম্ম। মায়ার দোলায় আন্দোলিত) আমার নিকট সকলই, এমন কি, আমার নিজের জীবন পর্য্যন্ত, ধুম, বিভ্রম, ও বাম্পবং| এই সকল বিষয়রাঁশি আলোকের ন্তাক্স আমার উপর দিয় চলিয়া ঘাঁয়। কোন পদচিহ্ন রাখিয়া যার নাতাহার উপর আমার অল্লই আস্থা । চিন্তা অহিফেনের স্থান অধিকার করিয়াছে) চিন্তা সকলকে উন্মত্ত করিতে পারে, সকল পদার্থকে, এমন কি পর্বতকেও অন্তর্ভেদী স্বচ্ছতা প্রদ্ধান করিতে পারে । প্রত্যেক সভ্যতা, যুগঘুগান্তের শ্বপ্নস্বরূপ ) ইহাতে আকাশ, পৃথিবী, প্রকৃতি ইতিহাস একপ্রকার অদ্ভুত বিচিত্র আলোকে প্রকাশ পায় এবং বিভ্রম-মভিভূত আত্মার প্রলাপ-নাটকের অভিনয় হইয়। থাকে | তত “উপছায়াকে যেরূপ দেখিতে পাওয়া যায়, ধরিতে পারা যায় ৭, আমি সেইরূপ উপছায়ার ন্যায় তরল পদীর্ঘ। **. *** না মরিয়াও আমি প্রেতে॥ ঠান্স। অন্ত সকলে আমারও নিকট স্বপ্নের
৪৭ ভারতবর্ষ ।
তায়, আমিও অন্যের নিকট স্বপ্রবৎ।” এই দেই অঙ্কৃত অনুভূতি যাহা বংশপরম্পরায় চলিয়া আসিয়া, গুধু ব্রাঙ্গণ্য-দর্শন কেন, ব্রাহ্মণ্য-নত্য হাতেও কতকগুলি বিশেষ লক্ষণ প্রকটিত করিয়াছে। আমিয়েলের “মাত্ম-প্র কাশ গ্রন্থে, ব্যবহারিক জীবনের একটি কথাও নাই । যেব্যক্কি বিশ্ব-আত্মাকে চিন্তা করে, পূর্ণস্বজূপে মনোনিবেশ করে আগন্তক ক্ষুত্র বিষয়-সকল কেমন করিয়া তাহার ভাল লাগিবে? যদি জগৎ মায়াই হইল তবে এরূপ জগতে ভাল স্থান অনুসন্ধান করিবার আবশাকতা কি? যদি দৃশ্যমান বাস্তব জগতে আমার কোন আস্থা না থাকে, দৃশ্যযাণ বাস্তব জগৎ আমাকে আর স্থান দেয় না। তারতবর্ষে ত ইহার ফল প্রত্যক্ষ দেখা যায়। দ্শন ও জ্োতিষশাস্্ ব্যতীত হিন্দুদিগের মার কোন বিজ্ঞান নাই। প্রকৃতির নিয়ম ও তথা মন্পন্ধানে গ্রীক্দিগের হ্যার হিন্দুদিগের কোন কৌতুহল ছিল না) কতকগুলি উপনিষদ্ মনে হয়, বাতুলের লেখ1, বালকের লেখা । তাহাতে কুকুররা ও পক্ষীরা তর্কবিতর্ক করিতেছে, দর্শনশাস্ত্ের আলোচনা! করিতেছে, তাহাতে ইতিহাসের কথা আদৌ নাই। এই বুহদায়তন সাহিত্য কেবল স্বপ্ন ও দর্শনের জটিলতার পূর্ণ। কোন একটি ঘটনার তারিখ, কোন গম্ভীর বিষয়ের উপাখ্যান বা কোন বংশাবলীর কথা ইহাতে কিছুই নাই। আপিয়ার বড় বড় ধর্মূলক ঘটনার বিষয় যাহা কিছু জানা যার তাহ প্রারই চীন পরিব্রাকদিগের নিকট হইতে। বৌদ্ধধন্ম কখন্ ভারতে আরম্ভ হইল, কখনই বা ভারত হইতে অন্তহিত হইল কিছুই জানিতে পারা যায় না। সত্যই যদি সমাজ ও সমাজের সভ্যতা-_ (যেমন আমিয়েল বলেন, আত্মার মুতিমান স্বপ্নমাত্র, ) ব্রন্মমাগরে উৎক্ষিপ্ত ক্ষণস্থায়ী তরঙ্গমার, তবে এমন বাতুল কে আছে বে, সভ্য- তার ইতিহান, সমাজের ইতিহান লইয়া মস্তিষ্ক আলোড়ন করিবে?
ভাঁরতবর্ষে-"জয়পুষ | $১
*... ... ব্রা্গণাধন্ম ষি একবার প্রতিষ্ঠিত হইল, দীর্শনিক ঘ্বপ্নের একবার যদি আরম্ত হইল, তাহা! হইলে বহিঃশক্রর আক্রমণ আর কিন্ধূপে প্রতিরুদ্ধ হইবে? গ্রাচীন ভারতের নাগরিক ব্যবস্থা-বন্ধন, সামরিক ব্যবস্থা-বন্ধন, রাষ্ট্রিক ব্যবস্থা-বন্ধন সকলই অনম্পূ্ণ, কিছুরই নির্দিষ্ট আকার নাই, সমস্ত হিন্দুজাতি “জেলির” ন্যায় থল্থলে, অম্পষ্ট, অনন্বদ্ধ, দুর্বল; কাজেই মুদলমান ইংরাজ যে কেহ প্রথম আসিয়া! আক্রমণ করিল, সেই অনায়াদে জয়লাভ করিল। হিন্দুর তাহাতে কি আসে যায়? যাহা! প্রন্কত সত্য, বাহার ধ্যানে ভব্যন্থণা হইতে মুক্ত হওয়! যায়, তাহারই স্বপ্নে মগ্ন হইতে দাও, তাহ! ধান করিতে দাও, শান্তিবাী কারের আবুত্তি করিতে করিতে সেই পরমাত্মার ধ্যানে মন্ত হইতে দাও, তাহ! হইলেই ইইল, হিন্দু মার কিছুই চাহে না”
সস গাতেকা
ভারতবর্ষে জয়পুর।
"কপিকাতাক্স ইংরাজী ভারতব্্য) কাঁশীতে বাঙ্গণের ভাঁরত- বর্ষ; আগ্রায় মৌগলের ভারতবর্ষ; এখানে রাজাদের ভারতবর্ষ, উপন্তাসের ভারতবর্ষ, গীতি'নাট্যের ভারতবর্ষ । *** *** ৮ এই রাজপুতানাকে কেহই জর করিতে পারে নাই। কত বিভিন্ন জাতি ভারতবর্ষের প্রত হইল, কিন্ত সকলেরই বিরুদ্ধে রাজপুতের! আপনাদের স্বাধীনতা রক্ষা করিয়া আমিয়াছে। বামায়ণের পৌরাণিক যুগে ২হাঁরা যে আর্ধ্যজাতি ছিল, এখনও ইহারা সেই আর্ধাজীতিই আছে। এখানকার রাঁজার বংশ-হুত্র ১৩৯ পুরুষ ভেদ করিয়া স্াবংশে দ খতলথে ক্র্্যধশ হইতে মহানুভ ৰ
4 ভারতবর্ষে।
রামচন্দ্রের উৎপত্তি । ইনি এখনও, সেই পুরাতন হিন্দু রাঁজাঁদের গ্রথা অন্ুনারে, মন্থুর ব্যবস্থা অবলম্বন করিয়! রাজ্য শামন করিয়া থাকেন। রাজার অধীনস্থ ঠাকুরেরাঁও চন্ত্র কূরয্য বংশ হইত্তে প্রস্থত_-ইহাদের৪ বংশাবলী কালের অন্ধকারে মিলাইয়া গিয়াছে । এখানকার সাধারণ লোকেরাও গৌরবর্ণ আর্্যজাতি হইতে প্রস্থত-__ ইহারা বিভিন্ন শ্রেণীতে ও গোত্রে বিভক্ত । রাজপুতমাত্রই জাতিতে ক্ষত্রিয়। এই যোদ্ধজাতি ব্রাহ্মণ-ব্যতীত আর কাহাকেও আপনা- দের অপেক্ষ। শ্রেষ্ঠ বলিয়। স্বীকার করে না। এই নিমিত্ত, এখানকার একজন কৃষকও আপনাকে রাজাঁর সমকক্ষ বলিয়া মনে করে) “রাজপুত”, অর্থাৎ রাজপুত্র বলিয়। আপনার পরিচয় দেয়। ইহাদের মধ্যে সদর্গ পুরুষোচিত আত্ম-মর্ধ্যাদার ভাব বিদ্যমান; একটি অশ্ব, একটি বল্পম, একটি ঢাল ইহাদের সম্বল? যুদ্ধ উপস্থিত হইলে, ইহারা নিজ-নিজ গোত্র-পতির অধীনে যুদ্ধে অগ্রসর হয়; আপনা- দের নগর ও দেবতাকে রক্ষা করিবার জন্ত পিতৃত্বরূপ রাজার পতাকাতলে আসিয় সম্মিলিত হয ।
হোটেল হইতে জয়পুরের যাহা কিছু দেখিতে পাই তাহাতে মনে হন্প যেন একটি নূতন জগতে আপিয়াছি। সাদা-সাদ1 ছোট- ছোট ছুর্গভূষিত পাহাড় এবং ছুর্সের বুরুঞজ-শ্রেণী দিগন্তে বিস্তু ত। মুরোপীয় মধ্যযুগের সরঞ্জীম এই উষ্ণ প্রাচাদেশে দেখিব আশ! করি নাই। রাস্তায় ছোট-ছোট গাধার পাল, তাহার মধ্যে দলে দলে ভ্ত্রীলোকের। গান গাইতে গাইতে চলিয়াছে; সওয়ারের। উৎকৃষ্ট আরব ঘোড়া ছটাইয়া চলিয়াছে; কোমর-বন্ধে ঢাল, পার্খে তলবার, মাথায় লাল পাগ্ড়ি, ইহাদের বড় বড় দাঁড়ি বিভক্ত হইয়া ছুই পাশে বিস্তৃত--এবং বামে ডাহিনে কাটার স্তায় থাড়া হইয়। উঠিম়াছে; ইহারা খুব আস্ফালন সহকারে চলিয়াছে।
ভারতবর্ষে - জয়পুর।
ভারতবর্ষে আদিয়! সাধারণ লোকের মুখে যেরূপ স্ত্রীসুলত কোঁম- লতা, আলম্ত ও স্বপ্রময় ভাঁব সচরাচর দেখ! যায়, ইহাদের মুখে সেরূপ কোন ভাব নাই। ইহারা খুব কার্্যতত্পর। পেয়াদা, ঘোড়-সওয়ার, উট, হাতী, ঝড় বড় প্রকাণ্ড গরুর গাড়ি, এবং ছোট-ছোট গাধায় রাস্ত। ভারাক্রান্ত; ধুলা ও বৌদ্রের মধ্য হইতে ইহাদের গোলযোগ শোনা যাইতেছে।
রাস্তা দিয়া চপিতে চলিতে আধ ঘণ্টার মধ্যেই ছুর্গবন্ধ-নগর- প্রাচীরের একটি তোরণের নিকট আসা যায়। সমুচ্চ বুকজ- শ্রেণীর তল দিশ্বা একটি দুর্গ সেতু পাঁর হইতে হয়, তাহার পর একটি ভিতরকার প্রাঙ্গণ, সেই প্রাঙ্গণে উটেরা বোঝ খালান করিবার জন্ত হাটু গাড়িয়া বসিয়াছে। এই প্রাঙ্গণ পার হইবামাত্র গতিনাট্োর দৃশা-পটের স্তায় হঠাৎ একট! অদ্ভুত অপরূপ, কুয়াশা বত, বর্ণনাতীত দৃশ্য নেত্রমমক্ষে উপস্থিত হয়।
গোলাপি রঙের দৃশ্য সর্ধবপ্রথমেই নেত্রসমক্ষে উপস্থিত। এখানে সকলই গোলাপী । পাঠক থেন কল্পনা করেন, এখানকার যে-কোন ছবি তার নন্মুখে ধরিব, সকলই গোলাপী রঙ্গে চিত্রিত। স্ুপ্রশস্ত রাঁজপথের ছুই ধারে গোলাপী বাড়ি, গোলাপী দেবমন্দির, গোলাপী প্রাসাদ, গোলাপী মৌধ-চুড়া এবং গোলাপী তান্দু-আকারের গৃহ। এই গোলাপী রং একটু ফিকা ও কোমল স্থুকুমার ধরণের ; এই রংটি রাস্তার এক সীমা হইতে আর এক সীমা পর্য্যন্ত বরাবর সিধা চলিয়াছে। গোলাপী বাড়ি, দৌকান, সব ঘধেঁষার্ঘেষি পাশাপাশি দিধাভাবে চলিয়াছে, ক্রমে সমস্তই যেন অপূর্ব গোলাপী রঙের বাপে মিলাই্। গরিয়্াছে। এই রঙ্গীন বাশ্পের মধ্যে একটিও কালো দাগ নাই, একটিও বিলাতী গাঁড়ি নাই; রাস্তার জনতার মধ্যেও বিচিত্র বর্ণচ্ছটা £নন আর কিছুই দেখা যায় না। রাস্তার
ষ্ঠ ভারতবর্ষে ।
ছুই ধাঁরের বাঁধানো-পদ্পথের উপর ধোঁলা বাজার বদিয়াছে, দৌকানদারের! হাটু গাড়িয়া সারি সারি বসিয়া আছে এবং সেই পদ-পথের উপর বিছানো লাল নীল রঙের শতরপ্রির উপর নান! প্রকার চাঁকচিক্যময় দ্রব্য সাজানো রহি্নাছে। জরির চটি জুতা, রাশীকৃত কলা ও নারিঙ্গি নেবু, রংকরা মৃষ্ঠি, বৌদ্রদগ্ধ নাঁনা গ্রকা- রের কাপড়, কি বামে কি ডাহিনে যে দ্বিকে চাই, সকলই চকৃচক্ করিতেছে, ঝকৃঝক্ করিতেছে । একটি সমস্ত দিন ধরিয়! জয়পুরে ঘুরিষ্বা বেড়াইতে ইচ্ছা করে-_সমস্ত জিনিসের খু'টিনাটি মনে করিয়া রাখিতে ইচ্ছা করে। এখানে চক্ষুর ক্লান্তি উপস্থিত হইবার সময় নাই। আমি কোচ্মানকে এত বলিতেছি “আস্তে আস্তে”-- তবু সে গাড়ি শীত্র হাকাইবে। শেষে কি করি, গাড়ি হইতে নাবিয়। পড়িলাম_এবং আপনার ইচ্ছামত ঢিমাচালে চলিতে লাগিলাম।
রাজপুত ঠাকুরের! ও কর্মচারীগণ, নাটকের অভিনেতাদিগের ন্যায়, ফুল-কাটা৷ জরির পোাঁক-পরিহিত এবং ইহাদের বিপুল গর্বিত শ্শ্রাজি হাঁত-পাখার আকারে মগুলাকাঁরে বিস্তৃত ১ মস্যণ্দেহ সুন্দর অশ্ববৃন্দ-ঢাঁল-তলোবারধারী গপন্তাসিক সৈনিকগণ, বিগ্ভালয়ের ছাত্র, প্রাসাদের রক্ষিদল, নগ্রশিশ্ড ক্রোঁড়ে করিয়া অশ্বারোহী স্ত্রীলোক-_-এই সমস্ত পাত্লা-কুম্বাশ চ্ছন্ন রাস্তা দিয়! সারি সারি চলিয়াছে। দোকানদারেরা তাহাদিগের দোকান হইতে হাত বাড়াইয়। সম্মিত মুখে আমাকে নানাপ্রকার রংকরা পাথরের দেবমূণ্তি প্রদর্শন করিতেছে, সকল দেয়ালে নীলরঙে নানাগ্রকাঁর ছবি আক ; হাতি, চিতা, গাঁছ, রেলগাঁড়ির কল-- হাস্তজ্নক বড় বড় আলখাল্ল। কোর্তা-পরা টকটকে লাল আড়ষ্টভাবে, দায়মান যুরোপীয় মুত্তি চিত্রিত। ৩০ বৎসর বয়সের পূর্ণবয়স্ক
ভাঁরতবর্ষে-_জয়পুর । 8৫
লোকের! ঘুড়ি উদ্ভাইতেছে ও স্কুলের ছাত্রদিগের স্তাঁয় ছুটাছুটি করিতেছে । এই সমস্ত শিশুপ্রকৃতি লোকের৷ হাসিতেছে খেলি- তেছে-ইহাদিগকে দেখিয়া মনে হয় কোন কবি অদ্ভুত-রসপূর্ণ কল্পনার খেয়ালে এমন একটি স্বগ্নজগৎ সৃষ্টি করিয়াছেন যেখানে সকলই লঘুপ্রক্কতি, অদ্ভূত, সুখী, হাওয়ার-্তায়-ফুর্ফুরে-_যেখানে কোন ছুঃখ নাই, কোঁন কুৎসিত বস্ত নাই। এই জগতের লোকের! জন্তদিগের সহিত ভ্রাতুভাবে একত্র বাদ করিতেছে, ইহার! আমাধিগের অপেক্ষ। ঢের সরল ও খোলা -প্রাণ। এই দেখ ছোট ছোট গাধা ও.উটের সারি) উটের! হেলিরা-ছুলিয়া ধীরগতিতে চপিয়াছে এবং বাস্তার ভীড় ছাড়াইয়া আপনাদিগের উন্নত ক উদ্ধে উত্তোলন করিয়াছে ) গৃহের ছাঁদে কটা-কটা বানরের বসিয়া আছে; দেখ কতকগুলি গরু, উহাদের বড় বড় হরিদ্র্ণ সিং) উহাদের দেহ সমস্ত সাদামনে হয় যেন মার্ধল পাথরে খুঁদয়া- বাহির-করা ।
কতকগুলি কুকুর দেখিলাম, তাহাদের গা হল্দিয়া, নীল ও লাল রঙে রঞ্জিত। আর একটু দূরে একটা চফের মধ্যে পায়রার বাক দেখিতে পাইলাম, বুহৎকার হস্তীর! যাইবামাত্র তাহার! উড়িয়। অন্যত্র বসিতেছে । এই মকল জীবন্ত পণ্ুপক্ষীর মধ, দেবত্বপ্রাপ্ত বুক্ষ, হস্তী, বানর প্রভৃতির ক্ষুদ্র সুঙ্িনকলওও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত । একটা বৃহৎ চৌমাথা রাস্তা--এই চৌমাথা দিয়। আর একটা রাস্তা ধরা গেল। এ রাস্তাটাও পূর্বের ন্যায় বৃহৎ, সিধা ও গোলাপী রঙে রঙ্জিত। এখানেও কতকগুলি মন্দির দেখিলাম, হস্তীর প্রস্তরমূত্তিকল মন্দিরের পাদদেশে প্রতিষ্টিত। এই গোলমাঁলের সীমা নাই-_-পথিকের দল, ফুলের রাশি, গর্দভ, উদ্ন, ঘোড়দওয়ার, দে,কানদার প্রভৃতিতে পরিপূর্ণ। পাররাৰ
৯ ভারতবর্ষে ।
বাক মাটিতে খু'টিয়া খুঁটিয়1! খাইতেছে, তাহার মধ্যে শত শত নিদ্রালু নির্বোধ গাভী শয়ান- লোকজনের গোলমাঁলে তাহাদের জক্ষেপ মাত্র নাই। কতকগুলি বালক বাঁশের লম্বা কচি-কচি ডাল লইয়। দণ্ডায়মীন--ভক্তের৷ সেই সকল ডাল ক্রয় করিয়। গাভীদের পদতলে উপহার দিতেছে; গাভীর খণস্বরূপ উহা! গ্রহণ করিষ। প্রশান্তভাবে চর্বণ করিতেছে । বৃক্ষশাখা হইতে শেওল!- পড়! মাঁটির ভীড়সকল ঝুলিতেছে, তাহার উপর ঝাঁকে-বাঁকে টিয়! পাখি আপিয়। বসিতেছে-_তাহাদের গোল-গোল স্রন্দর মাথার চারিধারে লোহিত রেখার ঘের। *** *** হঠাৎ ঘোড়ার পদক্ষেপ- শব্ধ ;__-এই গর্বিত অশ্বারোহীবৃন্দ না জানি কারা! অশ্বদিগের মহ্থথ গাত্র চিকৃচিক করিতেছে-স্ন্দবর অশ্বারোহীদিগের অস্ত্র সকল চক্চক্ করিতেছে । ইনি রাজার ভ্রাতা_ ইহার পশ্চাতে রাজপুত ঠাকুরেরা, পুরোভাগে আসা-সোটাধারী পদাতিকের! দৌড়ি- তেছে। ইহার মাথায় মথৃমলের পাগৃড়ি--গ।য়ে সবুজরঙের.ফুলকাট! চাঁপকান, নিজ অশ্বকে সম্পূর্ণ আয়ত্ত করিয়! নাচাইয়া নাচাইয়। চালাইতেছেন। ক্ষণকালের জন্ত ইহাকে দেখিতে পাইয়াছিলাম। ইহার উদার সাহপিক মুখশ্রীতে উচ্চকুল, পুরাতন শোণিত, চিরা- ত্যস্ত প্রতৃত্বের ভাব যেন স্পষ্ট অনুভব করা যাঁয়। ইনি একজন প্রকৃত ক্ষত্রিয়, ভারতবর্ষের আদিম বিজয়ীগণের সাক্ষাৎ বংশধর । হস্তিবৃন্দ হস্তিশালায় প্রবেশ করিল। এ দেখ, সাতটা হস্তী-_ কুষ্ণব্্ণ প্রকাঁও স্তপাঁকৃতি, গম্ভীর “ফিলজফর”, ধীরগতি, স্বকীয় দেহ- নিয়স্থ কোলাহলময় তাবৎ জীবপ্রবাহের উপর কৃপাদৃষ্টি করিতেছে । শুওদ্বারা মৃত্তিকা ঈষৎ ছু'ইয়া, প্রকাণ্ড মস্তকের উপর মাহুতকে ধারণ করি! ইহারা একে একে দ্বারমধ্যে অন্তহিত হইল । মানুষের ন্যায় পা নোয়াইয়া, কোমল পদতল ধীরে ধীরে বাহির করিয়া,
ভারতবর্ষে--জয়পুর | ১১]
ইহারা চণিতে থাকে--ছারাঁর ন্যায় একেবারে নিস্তব্ধ । ইহাদের প্রকাণ্ড ব্ষি্ন মস্তকের অভ্যন্তরে না জানি কি গভীর চিন্তা প্রবাহিত হইতেছে, যে সকল নিকৃষ্ট জীবজন্ত ও লোকজন ইহাদের সন্মুখ দিয়া যাইতেছে তাহাদের প্রতি দৃক্পাৎ নাই। ইহাদিগকে দেখিলে বুঝ যায়, কেন গজমুগধারী গণেশ জ্ঞানের দেবতা হইয়াছেন 1.**.****, প্রতিমুহূর্তে চিত্র পরিবপ্তিত হইতেছে । আমি এই চলন্ত ছবি আঁকিবার চেষ্টা! করিতেছি। প্রানাদের একট! উচ্চ দ্বারের সম্মুখে সুলচন্্বা জন্তপকল, উদ্, লোকজন, বাজপক্ষীর ঝাকৃ। তোরণের উপরে কুলার্দির অভ্যন্তরে একটা লোহিত হস্তিমৃত্তি নুম্থপ্ত-_তাহার সন্মুথে লোকেরা ঘুরিতেছে, চীৎকার করিতেছে। এবং তীক্ষধ্বনি ভুরি ভেরী হইতে হিন্দু-সঙ্গীত উথিত হইতেছে । সেই প্রশস্ত মুক্তস্থানের চতুদ্দিকে, মন্দির, স্মরণস্তন্ত, বিশ্ববিদ্া- লয়, গ্রাসাদশ্রেণী বিরাজিত। ইহাদের মধ্যে একটি অষ্রালিক! ঘোর গোলাপীবর্ণ, পিরামিডের স্যার সমুখিত। ইহার নয় তলা ও শত চূড়া এবং ইহার চৌবটি বহিরুদগত গবাক্ষদ্বার ১ বারাপ্ডা, তস্তশ্রেণী, ও প্রস্তর-খোদিত শত শত কৃত্রিম পুষ্পে ইহা বিভূ- বিত। সমস্ত গঠনপ্রণালী বাপ্পব বাধুবৎ লঘু, অদাধারণ ও অদ্ভুত। ইহা! বাধুংপ্রাসাদ । এই নামটি অতি স্ুন্দর। এই প্রকার, নগরের চাঁরিধারের ছোট-ছোট পাহাড়ের উপর মেঘ-প্রাসাদ ও সর্ধযমন্দির সকল দেখিতে পাঁওয়। যায়। নগরের অপর প্রান্তে যে গোলাপী রঙের দ্বার দেখ! ঘার তাহার নাম “পান্থাদ্বার ৮, আমর! যেন প্রাচ্যদেশের পরী-উপাখ্যানের দৃশ্য-মধ্যে আদিয়। পড়িয়াছি। তুরীনিনাম শোনা যাইতেছে । করতালের এরূপ ঘোরতর রব হইতেছে যে, অন্যদিকে মুখ ফিরাইয়। থাকিতে হয়। শব- সহ্যাত্রী উল্লাসপুর্ণ এক “্ল বাদক দ্রুতপদে চলিয়াছে--শুঙ্ষ শুভ্র
২৮ ভারতবর্ষে ।
বস্ত্রে আচ্ছাদিত মৃতদেহকে বাঁশে বীধিয়া লোকেরা লইয়! যাইতেছে । পরিবারবর্গ করতাল বাজাইতে বাজাইতে, লাঁফাইয়া লাফাইয়া চলিয়াছে এবং মধ্যে মধ্যে “রাম রাম” বলিয়া চীৎকার করিয়া উঠিতেছে । শববাহীদল অন্তহিত হইল। এক্ষণে দেখি- তেছি, শৃঙ্খলবন্ধ শিকারী কুকুরবুন্দ_-বেগ্নি রঙের পরিচ্ছদে আবৃত। উদ্যানে খাটিয়ার উপর, মহারাজার শিকারী নেকড়ে বাঘ, সুনম্য কৃশদেহ অদ্ভুত জীব, দেখিতে উদার-প্রক্কতি, ইহার তীক্ষ চক্ষে যেন বিদ্যুত খেপিতেছে, রক্ষকেরা মুঠ। বাড়াইয়া দিতেছে, আর দে কণ্টকিত জিহ্বার দ্বারা তাহ! চাঁটতেছে। অন্তত্র, একটা বিবাহ-ব্যাপার। চল্লিশ জন গায়িক। স্্ীলোক, জরদ রঙের রেশ্মি কাপড়ে সজ্জিত হইয়া ভূত্রলে বসিয়া আছে। কন্তার বয়ন দশ বতসর, সে কেবল গায়িকাদিগের মধ্যে দীড়াইয়া আছে। রাস্তার শেষভাগে পদ- পথের উপর একট! গরাদের পিছনে, দ্রশটা নরাহারী ব্যান্বরাজ মস্তক নত করিয়! তাহাদের কারাগৃহের মধ্যে ধীরে ধীরে পায়চালি করিতেছে । লোকেরা উহাদিগকে “সাহেব” অর্থাৎ প্রভু বলিয়া সম্বোধন করিতেছে--“দাহেব” নামের উপযুক্ত বটে। উহাদের মধ্যে বাহাঁকে সর্বাপেক্ষা দেখিতে ভাল, দে ষোলট। স্ীলোককে বধ করিয়াছে। *
এই বিচিত্র দৃশ্যের মধ্যে, একটি দৃশ্য প্রায়ই দেখা! যায়_-দে দৃশ্যটি বড়ই স্ুন্দর। ছোট ছোট ছেলেদের নগ্মদেহের কি নমনী- য়তা, কি লাবণ্য! যত দেখি ততই ভাল লাগে দেখিয়া ক্লান্ত হই না। ছোঁট-ছোট ছেলেমেঘেদিগের স্থগোল ট্যাবাটোবা ক্ষীণ- দেহ দেখিন্ে স্মন্তি চম্তস্কার। দীর্ঘ রুঝ্গব্ণ কেখগুন্ছ তাহাদের সুন্দর বিহ্বল মুখের উপর এবং সুকুমার-গঠন সুন্দর বক্ষের উপর
ভাঁরতবর্ষে--জয়পুর | 8৯
ঝুলিয়া পড়িয়াছে। দেই নবীন পেশীরাশি ও শোণিতের বল ও স্বাস্থ্য যেন স্পষ্ট অনুভব করা যায়। সে অতি চমত্কার। তাহা, দের শ্যামবর্ণ দেহচর্ম, আলোক ও বিশ্ুন্ন বাযুতে আচ্ছন্ন _তাহাতে আলোক ও ছায়া কেমন স্ুন্দররূপে মিশিতেছে। যুবতী স্ত্রীলোৌক- দিগের বক্ষের নিয়দেশ হইতে উদ্রের মধ্যদেশ পর্যন্ত অনাবৃত-_ তাহারা যেরূপ পরিস্ছদ পরে তাহা! অতি স্ুন্দবর। তাহাদের পরিহিত কোমল পরিচ্ছদ বেরূপ দেখিতে মধুর, নন্বন-তৃপ্তি কর, সাদাসিধা ও শান্তিময় এমন আর কোথাও নাই। যে সকল বালিকারা৷ অপেক্ষাক্কত কৃণ, তাহাদের আত্যন্তরিক দেহপঞ্জরের আন্দোলন স্পষ্ট থেন দেখিতে পাওয়া বাইতেছে ।
একটা মন্দিরের মধ্যে প্রবেশ করিলাম, তাহার প্রকাণ্ড সোপান রাস্তা পর্যান্ত আপিয়া পড়িরাছে। নিরদেশে, উদ্েবো হাটু গাড়িযা ঘুমাইতেছে এবং সোপানের ধাপের উপর কুকুরেরা রৌদ্ডে শুইয়া আছে। সোপান দিরা উঠিব্া একটা প্রাঙ্ণের সন্থথে আপিলাম, দেই মার্ধল-মাচ্ছাদিত প্রাঙ্গণে গাভীবৃন্দ মুক্ত- ভাবে বিচরণ করিতেছে । ইহার এক কোণে দুইটি পবিত্র বৃক্ষ প্রতিষ্ঠিত-_-একটি পুরুষ-বৃক্ষ বট এবং আর একটি স্ত্রীবৃক্ষ, তাহার নাম পিপ্লল। একজন বুদ্ধ প্রথম বৃক্ষটির চারিদিকে দ্রুতভাবে প্রদক্ষিণ করিতেছে, আর একটি বৃদ্ধা দ্বিতীয় বৃক্ষটর পাতা জল ঢালিতেছে। ইহার ধারে আর একটি দ্বিতীপ্প প্রাঙ্গণ, ইহ ্তস্ত-পরিধৃত.বারাগ্ডার দ্বার! বেষ্টিত) এইখানে, ছায়াতলে বসিয়! লোহিত বদনাবৃত কতকগুলি স্ত্রীলোক, পুরোহিতের মুখ হইতে নাকী-স্থুরে উচ্চাসত রামায়ণ-গাঁন শান্তভাবে শুনিতেছে। ঘোমটার নীচে ধে সুন্দর মুখগুলি দেখা যাইতেছে, তাহার। যে খুব ধ্যানে মগ্ন এনপ বোধ হয় না। এখানে সকলেই এক পরিবারের-মত
৫ ভারতবর্ষে ।
অবস্থিত। পুরোহিতের গলায় মালা, তিনি আদনে উপবিষ্ট, রামায়ণ পড়িবার সময় কখন স্থুর উচ্চে উঠিতেছে, কখন বা নীচে নাবিতেছে--এবং দেই ছন্ান্ুদারে তাহার দেহ আন্দোলিত হই- তেছে। অনেকগুলি চড়াইপাখী এই ভক্তবৃন্দের মধ্যে নির্ভয়ে বিচরণ করিতেছে, এবং বড় বড় কাক, নিদ্রিত গরুদের কাঁধের উপর লাফা ইয়া লাফাইয়া! বসিতেছে। হিন্দুধর্ম্বেরই এইটি বিশেষ লক্ষণ, এই ধর্ম মুক্তবাযুতে অন্ুষ্ঠিত। পুঙ্জার এই পবিত্র স্থান__ এইখানে, মন্দুরা, পক্ষীশালা ও মন্দির দকলই একত্রিত। পুরো- হিতের পশ্চাতে, দালানের প্রীস্তদেশে, অন্ধকারাবৃত একটা দেব- দিংহামন, তাহাতে একট পুত্তলিক। দেখিতে পাওয়া যায়--. কালো মুখ-ওয়ালা একটি ছোট পুতুল পার্বতী, লাল-কাপড়-পর৷ ছুটি দিংহ পাহার। দিতেছে । তাহার নীচে তাহার স্বামী মহাদেব) স্বয়ং মহাদেব নহে--তাহার লিঙ্গমূত্তি স্থাপিত। লিঙমুত্তি প্রাণের রূপক-চিহ্ব। বন্ধ্যা স্ত্রীপোকেরা এবং স্বামী-প্রার্থী যুবতীর। এইখানে প্রার্থনা করিতে আইসে।
লোকপূর্ণ চৌরান্তার অপর ধারে, মন্দিরের সম্মুখে, মহারাজার বিস্তালয় সমুখিত। বাঁষু মন্দিরের ন্যায় ইহারও গঠন অদ্ভুত ও রং গোলাপী; আমি দেখিয়া মনে মনে তারিফ কগিতেছিলাম, এমন সময়ে বিষ্ভালয়ের একজন ছাত্র আমাকে আহ্বান করিয়া ভিতরে লইয়! গেল। কালেজের প্রধান অধ্যক্ষের সহিত আমার পরিচয় করিয়া দেওয়। হইল; তিনি একট! অন্ধকেরে ছোট ঘরে, রাশীকৃত কেতাবের সম্মুখে বদিয়াছিলেন। তাহার হিন্দু-মুখশ্রী অতি মধুর, অতি সুন্দর, একটু চিন্তান্বিত, সমস্ত মুখের গঠন বিদ্যানুরক্ত ব্যক্তির স্তায় কৃশ ও উন্নতললাটনম্পন্ন ; তাহার পরিচ্ছদের মধ্যে সাদাসিধা একটি কালো রঙের লব্বাচাপ্কান মাত্র। অতি দংঘত অঙ্গভঙ্গীর
ভারতবধে-জয়পুর। ৫১
সহিত, খুব খাটি ইংরাজিতে ছুইচারিট স্বাগতো্তি ব্যক্ত করিয়া আমাকে পাঠশালার মধ্যে লইয়। গেলেন। উচ্চ শ্রেণী ছাত্রদিগের পরীক্ষ। নিকটবর্তী হওয়ায় তাহার! তজ্ন্য বাড়িতেই প্রস্তুত হইতেছে, কালেজে আইসে না) কেবল কালেজের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রর্দিগকে দেখিলাম। স্তত্ত-শোভিত বৃহৎ শালার মধ্যে, এক'এক দর্ল ছাত্র, এক একটি শিক্ষককে ঘিরিয়। বসিয়া আছে। চৌকি নাই, বেঞ্চ নাই, ডেস্ক নাই। আমরা প্রবেশ করিবামাত্র সকলে দাঁড়াইয়া উঠিল এবং আগ্রহ ও শদ্রতার সহিত অত্যন্ত অবনত তাবে আমাদিগকে সেলাম করিল। কিন্তু পাঠশালার আর একটি কাম্রায় কতকগুলি ছাত্র দাড়াইল ন।-বসিয়া রহিল।. প্রধানা- ধ্ক্ষ বলিলেন, “এই বিশেষ শ্রেণীটি কেবল নৃর্ধযবংশীয় রাজপুত্র ও ওম্রাহদিগের পুত্রদিগের জন্য রক্ষিত। ইহারা বংশগর্কে গর্বিত, তাই আমাদিগকে সেলাম করিল না।”
এখানকার মমন্ত অধ্যাপনা-কাধ্য সরকারী ব্যয়ে দেশীয় অধ্যাপকগণ-কর্তক সম্পন্ন হয় এবং পরীক্ষোত্তীর্ণ ছাত্রের রাঁজ- সরকারে কাজকর্ম পাইয়। থাকে । এখানে অস্কশান্ত্র, ইংরাজি ভাষা ও সাহিতা, ভারতবর্ষের বিভিন্ন ভাষা, পারস্তভাষ! প্রভৃতি শিক্ষা দেওয়া হম্ব। ইহা! ব্যতীত, কালেজের প্রধানাধ্যক্ষ বলিলেন, উচ্চশ্রেণীর ছাত্রদিগকে সংস্কৃত ও পাঁলী ভাষা এবং ত্রাঙ্গণ্য বৌদ্ধ পারস্ত ও আধুনিক দর্শনশান্্র বিষয়েও শিক্ষা দেওয়া হয়। টয়া মিল এবং স্পন্সর রীতিমত পঠিত হয়। কালেজের প্রধানাধ্যক্ষ বাঙ্গালী, তিনি স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া আমার সঙ্গে বিবিধ বিষয়ে কথা- বার্তা কহিতে পাগিলেন ; দেখিলাম, ইংলগ্ডে-_এমন কি দমস্ত যুরোপে আজ কাল বাহ! কিছু হইতেছে তিনি তদ্বিধয়ে সমাক্ অভিজ্ঞ। তিনি ফরাসী পণওত বুন্ব্ষু, বার্থলেমি দ্যাৎ হিলোক্সার,
৫২ ভারতবর্ষে।
বের্গেইন্ এবং ফরাঁদী দেশীয় সংস্কৃতপণ্ডিতদিগের উল্লেখ করিয়া প্রভৃত প্রশংসা করিলেন। অবশেষে বলিলেন_-“মোদ1 কথা, যুরোপের বিষয় আমরা যাহ কিছু দেখিতে পাই, তাহা ইংলগডের ভিতর দিয়।। ছাত্র যুবকের উচ্চশিক্ষার শ্রেণীতে প্রবেশ করিয়া ইংরাজি প্রাচীন সাহিত্য পাঠ করিতে আরভ্ত করে। সেকাপিয়ার, মিপ্টন, (হিন্দু মস্তিক্ষের পক্ষে সুন্দর আরন্ত) তৎপরে আযাডিসন, পোপ্-তাহার পর দর্শন ও বার্তী-শান্তরের গ্রন্থকার লক্, হিউম, আযডাম শ্মিথ্, বর্ক, অষ্টাদশ ও উনবিংশতি শতাব্দীর লেখকগণ, স্পন্সর পর্যন্ত সমস্তই পঠিত হয়। ইহার মধ ম্পেন্সরের প্রভাব সর্বাপেক্ষা অধিক। তবে, ফরাসী ও জন্মীন লেখকদের রচনা- সকল যাহা কিছু আমরা জানিতে পাই, তাহ! মূল হইতে না ইংরাজি অনুবাদ হইতে । সাধারণতঃ ফরাসী ও জর্মান ভাষা আমর! প্রায় কেহই জানি না। কিন্তু আজকাল ইংলও ছাড়। অন্য দেশের প্রতিও আমাদের শ্রদ্ধা আকৃষ্ট হইতে আন্ত হইয়াছে। হেগেল, ফিথ্টের সহিত আমরা ঘনিষ্টরূপে পরিচিত নহি বটে, কিন্তু আমর প্রাচ্য দর্শন-শান্ত্র পাঠ করিয়া থাকি ) বিশেষতঃ উপ- নিষদ্ ও প্রাচীন বেদান্ত-শান্ত্--উহার মধ্যেই স্পিনৌজা, কাণ্ট,, হেগেল, সপেন্হয়ার সমস্তই একাধারে পাওয়া যাঁয়।”
একটু একটু করিয়া তিনি ক্রমশঃ মাতিয়া উঠিলেন--ক্রমে দেখিলাম তাহার স্বদেশীয় প্রাচীনশান্ত্রের প্রতি প্রগাঢ় ভক্তি। তিনি বলিলেন, “পাচ ছয় বৎসর হইতে, আমাদের স্বদেশীয় শাস্ত্রের অনুকূলে আত ফিরিয়াছে। ইতিপূর্বে, ইংরাজি শিক্ষার প্রভাবে, কলিকাতার লেখকেরা হিন্দুধর্মের অন্তরিহিত দুর্নীতি ও অধযৌ্তি- কতার উল্লেখ করিয়া বিস্তর নিন্দা করিত। এখন আমর! বুঝিতে আরন্ত করিয়াছি, হিন্দুধর্মের অতিরাঞ্রত উক্তিদকলের মধ্যেও
ভারতবর্ষে--জয়পূর | ৫৩
একট1 গভীর তত্ব প্রচ্ছন্ন আছে। এখন আমাদের চিন্তাশীল লেখকের! হিন্দুধর্ম সমর্থন করিয়া থাকেন। আমাদের এখন এই উচ্চ আকাজঙ্ষাটি বলবতী হইয়াছে যে, আমর! আপনাতে আপনি ফিরিয়া! আসি-_আমাদের নিজত্ব ফিরিয়া পাই । দেখুন, মহারাজ। এই ইংরাজী ব্যাপার-সকল এখানে তো প্রবর্তিত করিরাছেন, কালেজ, মিউজিয়ম্, শ্রমশিক্প-বিদ্ভালয় স্থাপন করিয়াছেন, কিন্ত তিনি হিন্দুধর্মের বিরুদ্ধে কিছুই করেন না। তাহার “অন্বর” প্রাসাদে কাঁনীদেবীর সম্মুখে ছাগ লি হর। আমরা সাঙ্কেতিক চিত্রের মধ্যে উদ্দেশ্য দেখিভে পাই, অক্ষরের মধ্যে অর্থ দেখিতে পাই--যে মকল বাহা অনুষ্ঠান অজ্ঞ সাধারণের জন্ত কল্পিত হই- য়াছে, তাঁহার মধ্যে গু অভিপ্রায় আছে । ভারতবর্ষের মধ্যে সের! বুদ্ধিমান বাঁঙ্গালার নব্য অশ্ভ্রদায় থে ইংরাজী একেশ্বরবাদ এত আগ্রহ ও উতদাহের ধহিত গ্রহণ করিয়াছিলেন, সেই একেশ্বর- বাদের প্রতিকূলে আজকাল উন্ট। শ্রোত বহিতে আরন্ত হইয়াছে । আমরা এখন বুঝিতেছি, উহা! অপেক্ষা একটা গভীরতর তত্বের আমরা অধিকাঁরী এবং দেই তত্বটি আমাদের দেশের নিজস্ব ধন। ম্পেন্সরের লেখা আমর। পড়িতে ভালবাসি, তাহার কারণ স্পেন্ন- রও ঈশ্বরের ব্যক্তিগত অস্তিত্বের বিরোধী । তাহার মতে ঈশ্বরের সগুণ কল্পনা মানবীকরণের গ্রকারান্তর মাত্র। তাহার মতে ঈশ্বরের স্বরূপ অজ্ঞেয়, অনির্চনীয়, এক, কিন্তু সেই এক হইতেই কল্পে- কল্পে বিবিধ জীব ও সর্বপ্রকার আঁকার ক্রমশঃ অভিব্যক্ত হইতেছে, তাই তাঁহার লেখা আমাদের বেদান্তের ব্র্গকে অনেকটা ম্মরণ করাইয়া দেয় ।*
এই হিন্দু যাহ! বলিলেন তাহা কি সতা? ভারতবর্ষ আত্ম- চেতন! লাভ করিম সত্যই কি ইংলপীর জ্ঞান বুদ্ধির অধীনতার
৫3 ভারতবষে 1
যুগ-কাষ্ঠ আপনার স্কন্ধ হইতে দূরে নিক্ষেপ করিয়াছে? সত্যই কি ভারতবর্ষ জগৎ ও জীবন সম্বন্ধীয় স্বকীয় মতকে ইংরাজী জাতীর মতের বিরুদ্ধে ঈাড় করাইবার চেষ্টা করিতেছে ? মুসলমানের অত্যাচারে হিন্দুর মন্তক্ক অনেক দিন পর্যন্ত অসাড় হইয়াছিল, এখন কি ব্রিটানিয়ার শান্তি-ছায়ায় থাকিয়া সেই মস্তিষ্ক কাজ করিতে আরন্ত করিয়াছে? কোথা হইতে এইরূপ হইল? যাহ! হউক এ বড় আশ্চর্ব্য দৃশ্য__ছুইটি বিপরীত মীমার মানবজাতি পর- স্পর মুখামুখী করিয়া অবস্থিত। এক দিকে উদ্যম, কার্যকরী ইচ্ছাশক্তি, ইংরাঁজী কেজোভাব, আর এক দিকে হিন্দুর চিন্তা- কল্পনা__সেই দার্শনিক স্বপ্রদর্শনের প্রবণতা, যাঁহার প্রভাবে চিন্তা বিজয়ী হইয়! বাসনা ও মায়ার উপর প্রতৃত্ব লাভ করে এবং মনের সমস্ত কা্ধ্যকরী প্রবৃত্তিকে ধ্বংম করিয়া ফেলে ।
নেত্রের তৃপ্তি সাধন করিয়া, একাকী সেই আশ্চর্য্য গোলাপী ব্লীস্তার মধ্যে আপনাকে হারাইয়া, বিচিত্রবর্ণের আনন্দে প্রাণকে পূর্ণ করিয়া, এই জয়পুরের অদ্ভূত কল্পনায় উন্মত্ত হইয়া আজিকার দিনটা অতিবাহিত করিলাম। পরে, নগরের বাহিরে গিয়া যে পথটি অশ্বরের দিকে গিন্বীছে সেই পথটি অন্ুদরণ করিলাম। শুভ্র স্ন্দর একটি কটিবন্ধের ্তায় এই পথটি, ক্ষদ্রতরু-প্রমাণ অদ্ভূত এক- প্রকার হরিঘর্ণ ঘাসের মধ্য দিয়া ঘুরিয়! ঘুরিয়া গিয়াছে। এই কণ্টকাকীর্ণ পুষ্ট ঘাস অনেকদুর পর্যন্ত ভূমিকে আচ্ছন্ন করিয়া রাখিয়াছে। এই অচল কঠিন উদ্ভিজ্জ যেন পৃথিবী ছাড়া অন্ত কোন গ্রহের বলিয়া মনে হয়। এই ঘাসের অরণ্যের অপর প্রান্ত হইতে, পুরাকালের ইমারৎমকল--শত শত অট্রালিকা, শত শত মর্দর- প্রস্তরের মন্দির, উজ্জল সূর্য্যরশ্ির মধ্যে ঝক্ ঝক্ করিয়া] জপিতেছে।
ভারতবর্ষে--জয়পুর। ৫৫
লাল ও নীল পরিচ্ছদভূষিত নরনারীর দল আনন্দ-মনে চলিয়াছে। এত মযুরের ঝাক আমি কখনও দেখি নাই--মার এমন সুন্দর মুর। পথের মধ্যেই মযুরেরা বিচরণ করিতেছে এবং তাহাদের মণিময় পাখা হুর্যযালোকে ঝিক্ ঝিক করিতেছে । এই ময়ুরেরা মুক্ত অথচ পোষা, ইহারা কাহারও সম্পত্তি নহে এবং বিশ্বস্ত ভাবে লোকের মধ্যে বাস করিতেছে । মকল প্রকার নিরীহ জীবজন্ত হিন্দুদিগের নিকট পবিত্র; মযুরও এই কারণে হিন্দুদিগের সেব্য--তাহাদিগকে ছোলা খাইদত দেওয়া লোকে পুণ্য কার্য্য বলিয়া মনে করে। আমার ভৃত্য ছেদিলাল, আমাকে গন্তীর ভাবে বলিল, “এই ময়ূরের! কাহারও কিছু হানি করে না, কিন্ত ইংরাজের। এমনি ছুষ্ট, ইহা- দিগকে পাথর ছু'ড়িয়! মারে ।” আরও দূরে, একটি পরিত্যক্ত প্রাসাদ, বুনো ঘাসে মবুন্ধ হইয়া গিয়াছে_-মনে হয় ষেন উহা একটি প্রকাণ্ড সরসীর আর্শিতলে প্রতিঠিত। ইহার কালো বিষাক্ত জল অল্প অল্প ঝিক ঝিকৃ করি তেছে। ইহার তটদেশে কুন্তীরেরা স্থিরভাবে নিদ্রা! যাইতেছে। চারিদিকে সুন্দর ন্বর্ণোজ্জল পর্কত-শ্রেণী আলোকে পরিপূর্ণ এবং প্রশান্ত নীল গগনকে বেষ্টন করিরা আছে। হৃর্ধ্যের মূছু উত্তাপ, বাযু সক্ম, লঘু, হ্থথস্পর্শ এবং একটু মাদকতা-বিশিষ্ট। তাড়াতাড়ি আমর] 'মহারাজাঁর প্রাসাদ দেখিতে গেলাম। আস্তাবলে শত শত আরব ঘোড়া পদাক্ষীলন করিতেছে, কুক্ধুর- গৃহে শিকারী কুকুর সকল রহিয়াছে, হাতিশালায় হাতির! শৃঙ্খলা- বদ্ধ, উত্তিজ্জ-মণ্ডপে বিবিধ উ্ভিজ্জ রক্ষিত। এইবার গোলাপী নগরের নিকট বিদায় লগা যাইতে হইতেছে । ষ্টেমনের নিকটে, হিন্দস্থানী পুস্তকরাশির ভারে ভারাক্রান্ত একটি অন্নবয়স্ক রাজপুত ছাত্র আমাকে মধুর ভাঁবে “গুড় শাফ্টরনুন্*” বলিয়। অভিবাদন করিল।
৫৬ ভাঁরতবর্ষ।
যুরোপীয় মাজসক্জায় বেষ্টিত রেল-গাঁড়িতে আঁবাঁর ঘখন উঠি" লাম, তখন মনে হইল থেন এমন একটি উন্ন্তকারী রঙ্গাণয় হইতে বহির্গত হইলাম যেখানকার নাট্য-দৃশ্য দেখিয়া আম্মহারা হইতে হয়, যেখানে দেক্সপিররের কমেডির হ্যার কিম্বা ওয়াটোর প্যাষ্টো- রালের ন্যার বাস্তবকে ভূপিয়! যাইতে হয়। এই পিতৃবৎ-শাধিত জনসমাজ, এই সকল গোত্র, এই সকল হ্ব্যবংণীয় অশ্বারোহী রাজপুত ঠাকুরের দল, এই স্ুবিজ্ঞ রাজ! ধাহাকে প্রজার। ভালবানে, যিনি স্তেচ্ছাতন্্রী * পিতৃস্থানীয়; ঢালবপ্লমধারী এই সকল যোদ্ধুগণ» ইহাদের অদ্ভুত শ্ঞ্ররাপ্ি, ইহাদের দৌখান পরিচ্ছদ, রাস্তার হাসা- মনন স্থবী পোকগন, নীলরঙের কুকুর, শিকারী নেকুড়ে বাঁঘ_-এই সমস্তই গীতিনাট্যের জগং্বপ্র্গগং। কর-মদ্দিত উ্বেরি-ফলের রঙের ও গোলাপী রঙের বাড়াসকল বাহা পাথবের বলিরা মনে হয় না, ছোট ছোট পাহাড়ের উপর বু্ক-শেভিত ছুর্গনিবান, অন্ত লঘুধরণের ইমারৎমকল, শচুর্য-মন্দির 'বাধু-গ্রাসাদ? মেঘ- প্রাপাদ”, পান্নার দ্বার”, “শোভ।শাল।” বাশ্পবৎ লঘু পর্ণ-জাতীন (1707) ) উদ্িজ্জ-পরিপুর্ণ উদ্িজ্জ-মণ্তপ, ঘাসে পরিপূর্ণ মাঠ, ঝোপ-নিবাপী নীলক্ মনুর, কৃঞ্চনণিলা-সরদা-শোভিত পরিত্যক্ত প্রাসাদ মন্দির_এই দনন্ত গীতিনাট্যের দৃণ্যাবলী। এখানকার জীবনঘাত্রাও গীতিনাট্যের উপদুক্ত। এখানে কোনও দাত়িত্বপূর্ণ গান্তীর্ধ্য নাই, কোনও গুরুতা নাই, ছুঃখকষ্টের কোনও ভাব নাই-_-এই হাদ্যঘর শিন্নাজাতির আর কোনও কাজ নাই--আর কোনও ভাবনা নাই; ইহারা কেব্ল মন্র-গ্রন্তরের ছোট-ছোট
« তাহার দৃঠান্ত, রজার অনুমতি বাতাত জয়পুরে ফোটো গ্াফ্ ভোঁন। যায় না। ৃ |
ভাঁরতবর্ষে-বাঁরাণসী | ৫৭
দেবনূর্তি পঠ্ুর্তি গড়িতেছে, জরির জুতা তৈয়ারি করিতেছে, গৃহ-প্রাণীর নীল রঙের ছবির দ্বারা চিত্রিত করিতেছে, সুন্দর আরব ঘোঁড়ার সওরাঁর হইতেছে, আকাশের পক্ষীদ্িগকে পোধণ করি- তেছে, ঘুড়ি উড়াইতেছে এবং বিশ্বন্তচিন্তে মুক্ত আলোকে স্ুখ- ্চ্ছনে জীবনবাত্র! নির্বাহ করিতেছে । হ1! ইহাদের জীবন মাদাপিধা, সুধী, শিশু-প্রার়--ইহাদের মধ্যে সঙ্গীতের বিরাম নাই আনন্দের অবসাঁন নাই। আমাদের ছুঃখময় তমোময় যুরোপে ফিরিয়া! যাইনাঁর সময় আমি এই সমুজ্জল কবিতামন্ স্বপ্নটিকে সঙ্গে লইয়া যাইতেছি।
, ভারতবর্ষে বারাণনী।
নাট্য দৃশোর হঠাৎ পরিবর্তন হইল। ২৪ ঘণ্টা! উত্তর বাঙ্গলার দ্বেলপথে ও ২১ ঘণ্ট। গ্রেট পেনিন্সুলার রেলপথে ভ্রমণ করিয়া কাল সন্ধ্যার সদন্ব এখানে পৌছিলাম। পথে কিছুই বিশেষ দেখিবার নাই। মোঙ্গলীয্ম শীতন (দাঁজিলিং) প্রদেশ হইতে নামিয়া একেবারে ভারতের পুণাভূমিতে--সনাতনী গঞ্গাদেবীর পুণ্য তটে আসিয়া উপস্থিত।
এইথানেই সেই প্রাচীন তারতবর্ষ--হিন্দুর ভারতবর্ষ । এখানে মুরোপীয়েরা বাদ ক্র না, এখান দিয়া কেবল যাতায়াত করে মাত্র) ইংরাঁঞ্জ ইহার কিছুই পরিবর্তন করিতে পারে নাই ; ব্ণিক কিন্ব। কারখানাওয়াল! হইয়া! * রাজেরা এখানে রীতিমত আড্ড। গাড়ে নাই। . এই নগন্বী-এই হিন্দুরা_এই সকল মন্দির দশ
ঢা
৫৮ ভারতবর্ষে ।
শতাৰি পূর্বে যাঁছা ছিল এখনও তাহাই আঁছে। ইহ হিন্দুজগতের হৃদঘ-দেশ--দেই অগ্রিস্থান যেখানে ত্রাঙ্গণ্য অনল সর্বদাই প্রচ্ছ- লিত রহিয়াছে । দেই পুরাকালের ব্রাহ্মণেরা, ধাহারা৷ পুত্র-মুখ দেখিবার পর ঘোর অরণ্যে প্রবেশ করিয়া বিজনে" বিশ্বজনীন মূলতব্বের ধ্যান করিতেন, তাহার! এই বাঁরাণদী কিম্বা এই গাঙ্গেয় উপতাকার নিকটবর্তী প্রদেশের অধিবাসী । এই স্থানেই হিন্দু চিন্তার পরিণামস্বরূপ মৃহা-মহ| ছয়ট| দর্শন বিরচিত হইয়াছিল। পঞ্চবিংশতি শতার্ষিতেও এই নগর বিখ্যাত ছিল। হা, যখন নিনি- ভার সহিত ব্যাবিলনের দ্বন্দ চলিতেছিল, যখন টায়ার মধ্যধরাশায়ী- সাগরের উপকূলে উপনিবেশ স্থাপন করিতেছিল, খন এখেন্স নগরের হাটবাজার বাগ্ীদিগের বাক্যোচ্ছাসে প্রতিধ্বনিত হইভ এবং সেখানকার মন্দিরসকল গ্রস্তর-মূর্তিতে পুর্ণ হইতেছিল; যখন "রোম, কৃষকদিগের নিবাসস্বর্ূপ একটি ক্ষুদ্র নগরমাত্র ছিল, বখন পুরাতন মিসরীয় ধর্মমতের প্রাছুভাব ছিল, সেই সময এই প্রখ্যাত মহানগরী আছিকার ন্তায় তখনও গৌরবর্ণব্রাঙ্মণে পরিপূর্ণ। তখনও ব্রাহ্মণদিগের যে সকণ লক্ষণ ছিল, এখনও তাহাই দেখা বায়; কম্মকাণ্ডের অনুষ্ঠানের পাঁড়নে দেহবষ্টি একেবারে নত হইয়া পড়িয়।ছে, আপনার মধ্যে আপনি পুটুলি বাঁধিয়া আছে, দাশনিক স্বপ্নরর্শনে নিমগ্র, চিন্তার হক্গ তন্কগাল আরও স্প্মতর করিতে করিতে মাথা ঘুরিয়া যাইতেছে_-খেয়াল দেখিতেছে_-তাহাদের নিকট এই নীরেট জগৎ শ্বলিত গলিত হইয়া এমন একটি প্রশান্ত নান্তিত্বে পরিণত হইয়াছে, যেখান হইতে অস্তিত্বের প্রতীয়মান আবির্ভাব মাত্র নিরন্তর সমুখিত হয়। ইহাদের মধ্যে শাক্যমুনি একজন। এখান হইতে ত্রিশ ক্রোশ দূরে ইহার জন্স্থান এবং পাচ বদর কাল ধ্যান ধারণার মাধন1 করিয়। বারাণমীতে ইনি
ভারতবর্ষে - বারাণসী। ৯
নিজ মত প্রচার করিতে আসিয়াছিলেন। আজি আমাদের পুরা কালীন পাশ্চাত্যের কিছুমাত্র অবশিষ্ট নাই। ফে জগত একেবারেই মৃত--তাহার শেষ হইয়া গিয়াছে--কাঁলের অন্ধকারে তাহাকে একেবারেই গ্রাস করিয়। ফেলিয়াছে। কিন্তু এই কাশী নগর চির- ' কালই ভারতের সেই মহিমান্থিত কাঁশীধাম।
প্রভাতে, বখন ক্র্যমগ্ুল স্পন্দিত-ছৃদয়ে গঙ্গার পশ্চাতে উদ্দিত হয় তখন পঁচিশ হাজার ব্রাহ্মণ, হিন্দ-জনতার সম্মুখে, নদীর তটদেশে উপবিষ্ট হইয়া এখনও তারকার উদ্দেশে, পুণ্য নদীর উদ্দেশে, আদিম শক্তিমমূহের উদ্দেশে, প্রাণের দৃশ্যমান উৎপত্তি স্থানসমূহের উদ্দেশে, সেই প্র/চীন বৈদিক স্ততিগান মকল পাঠ করিয়া থাকে । রোম নগর ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের নিকট যত ন! পবিত্র, কাশী হিন্দুর নিকট তদপেক্ষা অধিক পবিত্র। উহার প্রত্যেক প্রস্তরথণ্ পরিভ্র। কাশীতে যাহার মৃত্যু হয়, কোনও মলিনতা কোননী পাপই তাহাকে স্পর্শ করিতে পারে না। থৃষ্টিয়ান হউক, মুসলমান হউক, গোহত্যাই করুক বা গোমাংসই আহার করুক, সে নিশ্চয়ুই কৈলাসধামে-_-শিবলোকে গমন করে। অতএব সেই ব্যক্তি ভাগ্া- বান্, জীবনের শেবভাগ যে কীশীতে কাটাইতে পারে। ছুই লক্ষেরও অধিক যাত্রী ভারতের সকল দিক্ হইতে এইথানে আসিয়া উপস্থিত হয়। তাহাদের মধ্যে অনেকে বৃদ্ধ ও মুতকল্প। ছুভাগ্য- বশতঃ যদি কাহারও কাশীপ্রাপ্তি না হয়, অন্ততঃ তাহার অন্তিম তন্মরাশি কাশীধামে পরে পাঠান হয়। এই উদ্দেশে পাঠান হয় যে, গঙ্গা পুত্রের অন্ত্যে্টি-ন্ত্র পাঠ করিয়! তাহার আস্তিম-ভম্ম গর্গা- দেবীকে সমর্পণ করিবে। হিন্দুরা বলে, “কাশী পুণাধাম কাশী-কাশীকে ধান করিলেই শান্তিতে মৃত্যু হয়।'
বাস্তবিকই এই নগরটি মসাধারণ। অন্তত্র, ধন্মাটরণ, প্রকাশা
৬৪ ভারতযে।
জীবনের এক অংশমাত্র, কিন্তু কাঁশীতে ধর্ম ছাড়া আর কিছুই দেখ। বায় না। ধর্ম এখানে সমস্ত গ্রাস করিয়া আছে-_মানবজীব" নের প্রত্যেক মুহুর্ত পুর্ণ করিয়া আছে--নগরকে মন্দিরে মন্দিরে ছশইয়া৷ ফেলিয়াছে। উনবিংশতি সহস্রেরও অধিক মন্দির, এতত্ব্য- তীত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেবাঁলয় অসংখ্য । মু্তির সংখ্যা ঘদি ধর তে! দে কাশীর জনসংখ্যার দ্বিগুণ। প্রা পাচ লক্ষ হইবে। কাল সন্ধ্যায় যখন পৌছিলাম, দিনের আলো তখনও ছিল, তাই বেড়াইতে বেড়াইতে নদীর ধার পর্যন্ত গেলাম। নগরের আকা-বীকা গলি- সকল অর্ধনগ্ন মানবকুলের গতিবিধিতে পরিপূর্ণ। দেবালয়ের ছ্বারের সম্মুথে লোকের বেশি ভীড় । গৌরবর্ণ ব্রাহ্মণের! ঠেলাঠেলি করিয়া চলিয়াছে; সন্নাসীরা আপন করিয়। উপবিষ্ট__ভন্মমাথা নগ্নদেহ-স্থির দৃষ্টি-চারিদিকের চঞ্চল গতিবিধির মধ্যে গ্রস্তরব 9অচল।
হল্দে ফুলের হার, মালা, প্রস্তরের শিবলিঙ্গ প্রভৃতি নানাবিধ ধন্মৌপিকরণে এখানকার দোকান সকল পরিপূর্ণ । ঘরের দেয়ালে, স্থারের উপরিভাগে, কুলঙ্গির উপর, নানীপ্রকার কদাকার দেব- মূর্তি-_কাহারও বা গজমুণ্ড-কাহারও বা গায়ে সাপ জড়ানো । স্থানে স্থানে কপ--তাহ! হইতে পচা ফুলের ছুূর্ন্ধ বাহির হইতেছে। সেই সকল কুপে দেবতার বাদ__তাহার চারিদিকে লোকের অত্যন্ত ভাঁড়। প্রাচীরের গানে নীলরঙে চিত্রিত হিন্দু দেবদেবীর পৌরাণিক কাহিনী । দেবদেবীর অশ্লীল মূর্তিঘকল মালার আকারে মন্দিরের চারিদিকে বেষ্টিত । এত দেবদেবীর মূর্তি যে, বড় বড় মন্দিরেও যেন আর ধরে না--রান্তার মধ্যে ছোট ছোট দেবাঁলয়েও দেবতা- দিগকে আশ্রয় লইতে হ্ইয়াছে-তাহাতে লম্বোদর গণেশ অথব। ভীষণ-মৃন্তি কাপীদেবী অধিষ্িত। এন্দির-বেদীর উপর থে জুই ফুল
ভারঙর্ষে-বাঁরাননী। ৬১
থাঁকে তাহাতে গঙ্গাজলের ছিট| দেওয়া হয়। এই গঙ্গাজলে ভিজিয্ব। ভিজ্িরা ফুলনকল গিয়া উঠে-তৎপরে গোবর ও এই পচা ফুলে মিশিয়া একপ্রকার কর্দন উৎপন্ন হয়। এই কর্দমের উপর দিয়া পিছলিতা পিছলিরা চলিতেছি--আর ছূর্সন্ধ ভোগ করিতেছি । এই মানব-জনতার মধ্যে আবার বানরের! লাফালাফি করিতেছে-_-খেলিতেছে--ঘরের ছাদে বসির আছে) এবং বন্ধন- ঘুক্ত গাতীসকুল ইতস্তত বিচরণ করিয়া ফুল খাইতেছে। প্রাচীন হিন্দু মহাকাব্যে অনংখ্য যুগযুগান্তের কথা, অসংখ্য দেবদেবীর কথা, অবংখা জীবন্ত উদ্ভিজ্জের কথা পড়িরা বেমন হতবুদ্ধি হই] পড়িতে হয়, এইথানকার ব্যাপারপকল দর্শন করিয়া আমার কতকটা সেই রকম মনের ভাব হইয়াছে। আমাদের স্বাভাবিক মনের গতি ও অভ্যাস বেন একেবারে ওলটপালট হইয়া গিয়াছে। মনে হয় যেন এমন একটা দেশে আসিফ়াছি যেখানে মানুষ পায়ে নাঃ ইাটিয়! মাথায় হাটে । এই মানবজাতি যেরূপে চিন্তা করে, অনুভব করে, জীবনযাত্রা নির্বাহ করে তাহা সম্পূর্ণ আমাদের বিপরীত _ আমাদের ভাবের সঙ্গে আদ মিশ খায় না। কাশীতে আসিয়া মনে হয়, যেন খেয়াল দেখাই এখানকার স্বাভাবিক অবস্থা | :.*.., পাচটার ময় উঠিলাম, সাড়ে ছটার ষময় নদীর ধারে উপনীত হুইলাম। প্রভাতের তরুণ আলোকে দিগন্ত পর্য্যন্ত অমস্ত স্থান তরল রজতবৎ শুত্রকান্তি। বুহৎ গঙ্গ! নিজ শ্যামল বক্ষ উদঘাটন করিয়া, কর্মময় ভাঙা-ভাঙা তরঙ্গলহরী বিস্তার করিয়া ছুই কুলের মধ্য দিয়! চলিয়াছে। একদিকে বালুকাময় বিস্তীর্ণ মরু-_-আর একদিকে মন্দির, প্রাদাদ, মজিদ, যন্রর-প্রস্তরের প্রাচীর-_যাহার ব্রেখানত্র গোলাঁবী কুয়াশার গভীরতম দেশে ক্রমশ মিলাইয়] গিয়াছে । ঘাটের প্রশস্ত ধাপমকল উদারভাবে নদী পর্যন্ত নামি-
৬২ ভারতবর্ষে ।
যাছে এবং হূর্যালোঁকে ঝকৃৰক্ করিতেছে । এইখানে হিন্দদিগের ভীড়। যাত্রী, পুরোহিত, ভক্তের দুল সবাই প্রাতাতিক অর্চনা! সমাধা করিবার জন্ত--উদীয়মান সূর্যাকে ও গঙ্গাদেবীকে পূজা দিবার জন্য এখানে সমাগত। সহআ্র সহত্র লোক। গৌরবর্ণ ব্রাঙ্মণেরা__ত্রিবলীশোভিত লগ্বোদর-_দীপ্তিমান মুণ্তিত মস্তক _- বৃহৎ বৃহৎ তৃণাচ্ছাদিত ছত্রতলে, প্রস্তর-ফলকের উপর উপবিষ্ট হইয়া পথিকদিগের নিকট শাস্ত্র হইতে শ্লোক পা& করিতেছে। শ্যামবর্ণ শৃদ্রের৷ মুখ্ডিতমস্তক, কেবলমাত্র অল্প এক্ গুচ্ছ কেশ ঘাড়ের দিকে লক্বমান-_অদ্ধ নগ্ন চটুল দেহ। স্ত্রীলোকের উজ্জ্বল রঙের কাপড়ে আপাদমস্তক আচ্ছাদিত। তাহার! দীাড়াইয়। সুধ্যের দিকে বাহু উত্তোলন করিয়া করযোড়ে পূজা করিতেছে । যতই আমাদের নৌকা জলের উপর দিয়া অগ্রসর হইতে লাগিল ততই *মন্দির ও লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি হইতে লাগিল । চারি শত ফুট প্রশস্ত বড় বড় সোপানশ্রেণী প্রকাণ্ড পিরামিডের ন্যায় উদ্ধে উঠিয়াছে, তাহাদের সহস্র সহত্র ধাঁপ-_সেই ধাপসমূহের সমান রেখাপাত। গুরু- ভার অইকোণ স্তগ্ভনগল জলমধ্যে নিমগ্ন; হর্ম্য-শ্রেণীর চৌকোন৷ সন্ুখ্ভাগ-_লাল পাথরে ফুলকাটা বড় বড় চুড়া-_মার্কলের ভিতর খোর্দা কুলঙ্গি সকল একটার পর একট! দৃষ্টিপথে আমিতেছে। পুরাতণ মিসরের স্তায়, আসিরিয়ার পৌরাণিক নগরের স্তায় এখানে পাথরের প্রকাও প্রকাণ্ড স্তপ, জ্যামিক্তিক গঠন-প্রণাণী-অনুমারে উপর্য পরি স্যন্ত। এই সকল অক্টালিকার নিয়ে বহুপুরাঁতন নদীর ধারে শতসহত্র হিন্দু গতিবিধি করিতেছে--ধর্মানুষ্ঠান করিতেছে । চারি ঘণ্টা ধরিয়। আমি নদীর উপর নৌকা করিয়। যাতায়াত করিলাম--এই সকল অশেষ বিচিত্রতা-_-আকার 'ও ভঙ্গীর অনন্ত তরক্ধ আমি কি করিয়া বর্ণনা করিব? আলোক-ধবল প্রশস্ত
ভারতবর্ষে-ধারাণসী । ৬৩
ডু
ধাঁপেক উপর: বাঁধা পোস্তার ধারে - ভগ্াবশি্ট মন্দিরের রাঁশীকৃত প্রস্তরের উপর-_আরও উচ্চে গবাক্ষের উপর-- প্রকাণ্ড প্রস্তর- স্তূপের ছাদে_- তৃণময় ছত্রারণোর তলে--শ্যামল দেহদকল পিল্- পিল্ করিতেছে -বিচিত্র রঙের বুদ যেন ভাসিতেছে। পাঁচটি নগ্নদেহ একটা থামের উপর হইতে এক লক্ষে জলে বাঁপ দিয় পড়িল__জলকণার স্ফুলিঙ্গ উচ্ছপিত হইয়া উঠিল।
তাহাদেরঙপশ্চাতে ত্রাঙ্গণেরা বিড়বিড়, করিয়া মন্ত্র পাঠ করিতে করিতে বুক্ষশাখা মাম্ষালন করিয়া জলে ক্রমাগত আঘাত করি- তেছে। আরও নীচে, গম্ভীর ও উন্নতকায় স্ত্রীলোকেরা জল হইতে উঠিতেছে-_সিক্ত ন।ল সাড়া হইতে টন্টস্ করিয়া জল পড়িতেছে। জনত। হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া, লোহিত পষ্টবন্ত্রে আবৃত হইয়া, শাস্্রানু- ,মোদিত আসন রচনা করিরা, একটা গ্রন্তরস্ত.পের উপর উপখিষ্ হইয়া এক ব্যক্তি একদৃষ্টে সূর্যের পানে গিহিয়া আছে-_-কত অন্ভুত ভঙ্গী ও মুদ্রা করিতেছে, দেখিলে মনে হয় উন্মাদগ্রস্ত; ছুইজন স্্রীলোক এক হস্তে নাক টিপিয়া ধরিয়া আছে, অপর হস্তে বুক চাপ্ড়াইতেছে ; একটি বৃদ্ধা একেবারে বক্রীভূত-- সর্ধার্গ কম্প- মান-তাহার গাত্রলগ্রসিক্ত সাড়ী হইতে তাহার শীর্ণতার রেখ। বেশ স্পষ্ট উপলব্ধি হইতেছে-বলীরেথাঙ্কিত হস্ত যোড় করিয়! সে ছয়বার পাক্ দরিয়া ঘুরিতেছে। আর সকলে, ও্ঠাধরের দ্রুত স্পন্দন সহকারে, মধ্যে মধ্যে করপুটে জল উঠাইয়া সম্মুখে নিক্ষেপ করিতেছে ।
শিবের নিকট, গণেশের নিকট, কুর্য্যের নিকট, অসংখ্য স্ততি বন্দনা উখিত হইতেছে। একমুহুর্তের জন্ত এক একবার সেই
গুরুভারাক্রান্ত অভিভূতভাব শবদয়ে উপলব্ধি করা ধায়, যে ভাব
৩৪ ভারতবর্ষে ।
পুরুষানুররম ক্রমাগভ বদ্ধিত হইয়া আধ্য-মন্তিকের গঠন-পরিবর্ভন করিয়া ছিন্দুদর্শন ও হিন্দুকাঁবোর আকারে পরিণত হইয়াছে । এই- রূপ উপলব্ধি হয় যে, বিশেষ বিশেষ নশ্বর সত্তার পশ্চাতে একটা! মহাশক্তি বিদ্যমান, যে শক্তি সর্বপ্রকার পদার্থ ও সত্তা উৎপাদন করে, যাহা! অবিনশ্বর, যাহা অনন্তকাল বর্তমান, সহত্ম সহ জন্ম- মৃতার মধ্দো যাহার প্রকাশ এবং যাহার কদাঁচ ক্ষয় হয় না। ' এই শক্তিকেই হিন্দুরা পুজা! করে_-এই শক্তিপুজাই তাঙ্জদের ধর্মের ঠিন্তিভূমি। এই কথাটা বদি একবার উপলব্ধি করা ঘায়, তাহা হইলে সর্বপ্রকার অনঙ্গতির ব্যাখা। আপনা! আপনি হইয়া যায়। হিন্দুধন্মের মধ্যে অনভাজাতিনুলভ পৌন্তলিকতার সহিত অকিস্ক্ষ তত্বচিন্তার সম্মিলন হইয়াছে । এই হিন্দুরা তেত্রিশকোটি দেবত। মানে, তা ছাড়া পঞ্চভূ ই; “পঞ্পক্ষী বৃক্ষ তারকা প্রন্তর মকলকেই পূজা করে। জগ: বাদ _একে ধরবাদ--বহুদেববাদ সমস্তই ইহার মধ্যে এব্ধৃধারে বর্তমান বিশ্বের; সার্ভৌগিক সন্তাকে কিন্বা তাহার বু গ্রকাশকে এক করিয় দ্রেখ,কি বহু করিয়। দেখ,অডভাবে দরখঠকি-স্বাত্মাভাবে দেখ»বৈ ভাবে দেখো, তাহা, রই উপর এই বিশেষ. বিশদ নির্উর করে। একবার ইহা বুবিতে পারিলে তাহাদের বাতুল কল্পনার অর্থ পাঁওয়1 যায়, তাহাদের কাব্যগত অদ্ভুত স্বপ্নকাহিনীর ব্যাখ্যা হয়। হিন্দুরা প্রকৃতির মধ্যে মগ্ন হইয়া গিয়া, হস্তী বানর ভন্নুক কীট পতঙ্গ উদ্ভিজ্জ সকলকেই আপনাদের সমকক্ষ সঙ্গী করিয়! লইয়াছে। অধিকস্ত, তাহারা একটা মহাপ্রাণ উপলব্ধি করিয়াছে, যে প্রাণ তরল তরঙ্গ- ময়, যাহা মরিতেছে, জন্মিতেছে, বুদ্ধি পাইতেছে এব বে প্রাণ বিচিত্র ও চিরপরিবর্তনশীপ। কিন্ধ যখন আমি এই লোকারণ্োর মধ্যে এই দকল মন্দিরের মধ্যে, মুঘলমান মন্জিদের ছুইটি সমুন্নত
ভারতবর্ষে--বারাণদী | ৬৫
মৌধ-ধবল মিনার সুনীল গগনপটে অঙ্ধিত দেখিলাম তখন আঁার
একটা খুব তফাৎ মনে হইল। এই মিনার ছুটি গগন ভেদ করিয়া
কেমন, দিধ| উঠিয়াছে। প্রার্থনার একান্তিক আগ্রহ--অন্তরের
একটি আকুল ধ্বনি ঘেন' মূর্তিমান হই অগ্রতিহতবেগে উদ্ধে
ছুটিয়াছে।1এই মিনারের গঠনে এমন একটি জাতির হস্ত দেখিতে পাওয়। যায়, যে জাতি অনাড়ম্বরগ্রিয়, ইচ্ছাশক্তিদম্পন, একেশ্বর' বাদী এবংদা রহ পরব আবেগে ধা
বিজ্ঞাপন ।
সঙ্গীত-প্রকাশিক| |
( সঙ্গীত বিষয়ক মাসিক পত্রিকা )
শীজ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর
কর্তৃক সম্পাদিত।
মংস্কৃত সঙ্গীত-গ্রন্থের অনু বাঁদ এবং বিবিধ হিন্দী ও বাঙ্গলা গানের মহজ স্বরলিপি ইহাতে প্রকাশিভ হয়।
নং ২*৯ কর্ণগুয়ালীসন্ত্রীট ভারত মদীত সমাজে প্রাপ্তব্য। আগ্রম বার্ষিক মূল্য খ৭।